পাবনার সাদেক আলী। বয়স ৯০ ছুঁয়েছে। আর স্ত্রী মরিয়ম বেগমের ৭৫। ৬০ বছরের সংসারজীবন তাঁদের। বয়সের ভারে দুজনই শারীরিকভাবে ‘অচল’ হয়ে পড়েছেন। তবু ভালোবাসা কমেনি একটুও। এই বয়সেও একে-অপরের নির্ভরতা হয়ে বেঁচে আছেন তাঁরা। অচল শরীরে রোজগারের চেষ্টা করেন স্বামী। আর স্ত্রী করেন বাড়ির সব কাজ। এভাবে হাসি-আনন্দে কাটছে দুজনের জীবন।
অনন্য ভালোবাসায় বাঁধনে জড়িয়ে থাকা এই দম্পতির বাড়ি পাবনা জেলা শহরের বাংলাবাজার মহল্লায়। তাঁদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। ছেলেরাও থাকেন অন্যত্র। আর্থিকভাবে সচ্ছল না হলেও নিজেদের দেখভাল নিজেরাই করেন এই দম্পতি।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর নিয়ে সাদেক আলীকে এখনো জীবিকার তাগিদে পথে পথে ঘুরতে হয়। গত ১৭ জানুয়ারি শীতের সকালে শহরের রাস্তায় মাস্ক, টুপি ও মোজা বিক্রি করছিলেন তিনি। সেদিন এ ছবি ছাপা হয় প্রথম আলোর অনলাইনে, যা দেখে এই দম্পতির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ান এক প্রবাসী শিক্ষক। লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইট নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে এই দম্পতিকে মাসে মাসে আর্থিক সহযোগিতা দেবেন তিনি।
রোববার সকালে খোঁজ নিতে সাদেক আলীর বাড়িতে গিয়ে মেলে এক অনন্য দৃশ্য। ভাঙা টিনের দুটি ঘর নিয়ে বাড়িটি। মিষ্টি রোদে উঠানে বসে আছেন দুজন। পরম মমতায় সাদেক আলীর চুল-দাড়ি ছেঁটে দিচ্ছেন স্ত্রী মরিয়ম বেগম।
এ সময় কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। মরিয়ম বেগম জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তাঁর স্বামী। সবে বিছানা থেকে উঠেছেন। চুল-দাঁড়ি বড় হয়ে গিয়েছিল, তাই ছেঁটে দিচ্ছেন। এখনো তিনি স্বামীর কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে সব কাজ করে দেন। স্বামী অসুস্থ থাকায় নিজে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। অভাব থাকলেও কাজকর্ম হাসিঠাট্টায় দুজন মিলে বেশ ভালোই কাটে তাঁদের সময়।
আর সাদেক আলী জানান, তখন তাঁর বয়স ৩০–এর নিচে। মরিয়ম বেগম পাশের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। প্রথম দেখায়ই ভালো লাগা তৈরি হয় মনে। এরপর মায়ের ইচ্ছায় তাঁদের বিয়ে হয়। প্রেমটা শুরু বিয়ের পরেই। দিনে দিনে দুজন দুজনের অভ্যাসে পরিণত হন। ভালোবাসায় গড়ে তোলেন সংসার। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই কাটিয়ে দিতে চান। পাশে থাকতে চান একে অপরের।
কথা হয় বাড়ির পাশে থাকা সাদেক আলীর পুত্রবধূ রিতা খাতুনের সঙ্গে। ১৪ বছর আগে এ বাড়িতে বধূ হয়ে আসেন তিনি। শুরু থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ির ভালোবাসা দেখছেন। অভাবের সংসারে মাঝেমধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হলেও তা স্থায়ী হতে দেখেননি কখনো।
যোগাযোগ করা হলে লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইটের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব রাব্বানী বলেন, মাঝেমধ্যেই এই দম্পতির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এভাবেই টের পেয়েছেন, দুজনের প্রতি দুজনের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা। একজন অসুস্থ হলে অন্যজনকে উদ্বিগ্ন হতে দেখেছেন বহুবার। তাঁদের এই ভালোবাসা অনুকরণীয় বলে মনে করেন তিনি।
( সূত্র : প্রথম আলো-প্রতিবেদনটি লেখেছেন পাবনার সিনিয়র সাংবাদিক সরোয়ার মোর্শেদ)
আরও পড়ুন :