ঈশ্বরদীতে অবস্থিত দেশের একমাত্র মিষ্টি জাতীয় ফসলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএসআরআই)। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি চলছে মহাপরিচালক (ডিজি) ছাড়াই। বিএসআরআইয়ে মহাপরিচালক না থাকার কারণে গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিক ও আনসার সদস্যরা দুই মাস ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত নভেম্বর মাসের বেতন পাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করছেন তারা।
জানা গেছে, ৫ বছর ৮ মাস বিএসআরআইয়ে ডিজি পদে কর্মরত থেকে গত অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখে চাকরি থেকে অবসরে যান ড. আমজাদ হোসেন। তিনি অবসরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউটের ডিজি পদে কাউকে নিয়োগ বা পদায়ন না করায় মূলত এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মহাপরিচালকের অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কুয়াশা মাহমুদ। তবে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়ে বা প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার তার নেই। এ কারণে বিএসআরআইয়ের সব কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বিএসআরআই কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানে ২ শতাধিক বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ফার্মে কাজের জন্য শ্রমিক ১১৭ জন ও নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্য রয়েছে ৩২ জন। বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নভেম্বর মাসের বেতন পাননি। ডিসেম্বর শেষে তাদের দুই মাসের বেতন পাওনা হবে। অন্যদিকে শ্রমিক ও আনসার সদস্যরা অক্টোবর-নভেম্বর মাসের বেতন না পাওয়ায় ডিসেম্বর শেষ হলে তাদের পাওনা হবে তিন মাসের বেতন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসআরআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মহাপরিচালক না থাকায় প্রতিষ্ঠানের গবেষণাসহ সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ডিজির স্বাক্ষর ছাড়া অর্থ ছাড়ের কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে প্রায় দুই মাস ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিকরা বেতন-ভাতা পাচ্ছে না।
শ্রমিকরা বেতন পাননা বলে স্বীকার করে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ফার্ম ইনচার্জ সনজিত মন্ডল বলেন, ডিজির পদে নতুন নিয়োগ না দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিএসআরআইয়ের বিভিন্ন ফার্মে ১১৭ জন শ্রমিক কাজ করেন বলে তিনি জানান। ডিজির অবর্তমানে দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কুয়াশা মাহমুদ বলেন, ডিজি ছাড়া আর্থিক বিষয়ে অনুমোদন দেয়ার এখতিয়ার তার নেই। যার কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিকদের বেতন পাওনাদি পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ডিজি নিয়োগ দিতে দেরি কেন হচ্ছে জানতে চাইলে এই বিজ্ঞানী বলেন, আমার জানা নেই, এটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় ঈশ্বরদীতে ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের নাম পরিবর্তন করে করা হয় ‘বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউট। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ইক্ষুসহ, তাল, খেজুর, গোলপাতা, সুগারবিট, স্টেভিয়া ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় ফসলের গবেষণা ও কলা কৌশল উদ্ভাবন অব্যাহত রয়েছে।