শারদীয় দুর্গাপূজার দিনক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। এ উৎসবে প্রধান উপজীব্য প্রতিমা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবকে ঘিরে পাবনার ঈশ্বরদীতে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।
সম্প্রতি সরেজমিনে আরামবাড়ীয়া রায়পাড়া বারোয়ারী শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির গিয়ে কারিগরদের প্রতিমা তৈরি করতে দেখা য়ায়। কথা বলার ফুরসত নেই তাঁদের। নিভৃতে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এখন চলছে খড় আর কাদামাটি দিয়ে প্রাথমিক কাজ। কিছুদিন বিরতি দিয়ে প্রতিমাতে দেওয়া হবে রংতুলির আঁচড়।
কোলাহল মুক্ত পরিবেশে মৃৎশিল্পী সজল কুমার পাল, সজীব কুমার পাল ও বনমালী কুমার পাল দলবদ্ধ হয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা এসেছেন মাগুরা জেলার মহম্মদপুর এলাকা থেকে।
জানা যায়, একটি মণ্ডপের প্রতিমা তৈরিতে এই মৃৎশিল্পীদের তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। আর বড় মণ্ডপের হলে সেক্ষেত্রে পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। উপজেলার তিনটি মণ্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তারা। একটি মণ্ডপে প্রতিমার প্রাথমিক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রতিবছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবীদুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। শুধু জীবিকার জন্যই নয় এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি, ভক্তি আর ভালোবাসা।
প্রতিমার কারিগর সজল কুমার পাল বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে এই মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত আছি। প্রতিবছর আমরা ৫ থেকে ৬টি প্রতিমা তৈরি করি। এসব তৈরি করে পারিশ্রমিক হিসেবে যে অর্থ উপার্জন করি এটা মোটামুটি। তবে টাকার চেয়ে ধর্মীয় অনুভূতি ও ভক্তি আমাদের মধ্যে বেশি কাজ করে।’
কারিগর সজীব কুমার পাল বলেন, ‘এখানে আমি এবারই প্রথম কাজ করছি। প্রতিমাটির কাজ সমাপ্ত হলে আমরা আরও আরেকটি প্রতিমার কাজ করব।’
মৃৎশিল্পী বনমালী কুমার পাল বলেন, ‘আমরা এখানে দুটি কাজ করেছি, একটি পাকশী ও সাহাপুরে। এ বছর আমি আমার দল নিয়ে এ পর্যন্ত নয়টা প্রতিমা তৈরি করেছি। বাকি সময়ে আরও চার-পাঁচটা বানাব। প্রাথমিকভাবে প্রতিমা তৈরির ১০ থেকে ১৫ দিন পর আমরা সেগুলোতে রং করি।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, উপজেলায় প্রায় ২৯টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঈশ্বরদী পৌর এলাকায় রয়েছে ৮টি মন্দির। সাঁড়া ৫, পাকশী ৩, সাহাপুর ২, লক্ষ্মীকুন্ডা ২, দাশুড়িয়া ২, সলিমপুর ১ ও মুলাডুলি ইউনিয়নে রয়েছে ৬টি মন্দির। বাঙালি হিন্দুর উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়া শুরু হয় মহাষষ্ঠী থেকে। আগামী ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজা দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে আর শেষে হবে ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে পূজা উদযাপন সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছি। পূজার সময় গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ বিভিন্ন এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া কন্ট্রোলরুম খোলা, সাইবার মনিটরিং, টহল পুলিশ দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর যে অনুদান বা উপহার দেওয়া হয়, তা প্রক্রিয়াধীন। তালিকা অনুযায়ী মণ্ডপ বা মন্দির কর্তৃপক্ষকে উপহার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তিনি। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দুর্গাপূজার কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও।’