আইয়ুব আলী হত্যার ঘটনায় নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) শহিদুল ইসলাম বকুলের নামে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলাটি আমলে নিয়ে নাটোরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে নাটোরের বাগাতিপাড়া আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ এ নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তিনি আগামী ২৭ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
আইয়ুব আলী বাগাতিপাড়া উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রাজশাহীর হরিয়ানা চিনিকলের নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আইয়ুব আলীর স্ত্রী শাহানাজ পারভীন (৫০) এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বাগাতিপাড়া উপজেলার স্যানালপাড়া গ্রামের মো. মহিদুল ইসলাম (৩৬), মাড়িয়া গ্রামের মো. মিজানুর রহমান (৩৬) ও মো. মাইনুল ইসলাম (৩২) এবং মো. আব্দুল মজিদ দীর্ঘদিন ধরে তার আইয়ুব আলীর কাছে মিথ্যা অভিযোগে টাকা দাবি করে আসছিলেন। পরে প্রধান অভিযুক্ত এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল নির্বাচিত হওয়ায় তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তাদের পরামর্শে এমপি বকুল তার স্বামীকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান। অভিযুক্তরা ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে তিনি ও তার স্বামী এবং অভিযুক্তরা এমপি বকুলের বাড়িতে নিয়ে যান।
এসময় এমপি বকুল সবার সামনে বলেন, মাড়িয়া গ্রামের সবাই চোর। এই শালাকে বেঁধে ফেল। সাদা স্ট্যাম্পে সই নে। সই না দিলে গাছে ঝুলিয়ে মারপিট কর।
এরপর অভিযুক্তরা তার স্বামী আইয়ুব আলীকে বেঁধে ফেলেন। এসময় এমপি বকুল নিজে তার স্বামীকে চড় থাপ্পর মারতে থাকেন।
একপর্যায়ে তার স্বামী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় আইয়ুবকে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে সময় তিনি বাগাতিপাড়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে এমপির বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি পুলিশ।
স্বামী হত্যার বিচারের আশায় তিনি গত ১ জুন বাগাতিপাড়া আমলি আদালতে আবার অভিযোগ করেন। বিচারক সেদিন কোনো আদেশ না দিয়ে এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) আদেশ দেওয়ার জন্য তারিখ ধার্য করেন। সে অনুযায়ী বিচারক বৃহস্পতিবার মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন এবং আগামী ২৭ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
বাদীর আইনজীবী সুফি মো. মমতাজ রায়হান সিনা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আইয়ুব আলীর ছেলে সোহাগ জানান, কয়েক বছর আগে তার বড় ভাইয়ের বিয়েতে আসা একজন অতিথির সঙ্গে অভিযুক্ত মহিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মাইনুল ইসলাম ও আব্দুল মজিদের পরিচয় হয়। তারা ওই অতিথির কাছে চাকরি পাওয়ার আশায় কিছু টাকা দেন। পরে চাকরি ও টাকা ফেরত না পেয়ে তার বাবাকে অন্যায়ভাবে সেই টাকা ফেরত দিতে চাপ দেন তারা। অথচ তার বাবা বা পরিবারের কেউ ওই টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানতেন না।
এ বিষয়ে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল জানান, তার বিরুদ্ধে করা এ অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। তার বাড়িতে সেদিন মারপিট বা হত্যার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। নির্বাচন সামনে, তাই কারো বুদ্ধিতে প্ররোচিত হয়ে এ অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।