বুধবার , ১ মার্চ ২০২৩ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. নির্বাচন

ঈশ্বরদীর আদিবাসী পল্লীর একমাত্র স্কুলটি বন্ধ

প্রতিবেদক
আমাদের ঈশ্বরদী রিপোর্ট :
মার্চ ১, ২০২৩ ২:৪১ অপরাহ্ণ

ঈশ্বরদী আদিবাসিপল্লীর (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো এখনো পৌঁছেনি। অভাব-অনটন, সামাজিক বৈষম্য, অসচেতনতা ও কুসংস্কারের বেড়াজালে বন্দি আদিবাসী শিশুরা শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আদিবাসী পল্লীর একমাত্র শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ। পুনরায় প্রতিষ্ঠান চালুর কোন উদ্যোগ নেই।

ঈশ্বরদীর বিভিন্ন গ্রামে ৭টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী গ্রামে মাল পাহাড়িয়া ও মুলাডুলির পতিরাজপুর গ্রামে বাগদি সম্প্রদায় বেশি বসবাস করেন। এই দুই আদিবাসী পল্লীর শিশুদের জন্য নিজস্ব কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে শিশুদের পাশ্ববর্তী গ্রামের স্কুলে যেতে হয়। দূরের পথ পাড়ি দিয়ে অনেক শিশু স্কুলে যেতে চায় না। ফলে শিক্ষাবিমূখ হয়ে পড়ছে শিশুরা।

সবচেয়ে বড় আদিবাসি পল্লী মারমীতে খ্রিষ্টান মিশন পরিচালিত একমাত্র শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট ফিলিপস শিশু শিাকেন্দ্র ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটির অবকাঠামো এখনও রয়েছে। কিন্তু শিশুদের কোনো প্রাণচাঞ্চল্য নেই। পল্লীর বাসিন্দারা জানান, স্কুলটিতে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। শুরুতে খ্রিষ্টান মিশন এটি পরিচালনা করলেও পরে কারিতাস নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এর দায়িত্ব নেয়। কিন্তু অর্থাভাবে তারাও ২০১৮ সালে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। আদিবাসী পল্লির শিশুদের অনেকেই এখন আর স্কুলে যায় না, তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে মাঠে কাজ করে। পায়ে হেঁটে এক-দেড় কিলোমিটার দূরের স্কুলে গেলেও তাদের কষ্টের শেষ নেই।

মারমী গ্রামের আদিবাসী শিক্ষার্থী সেজুতি বিশ্বাস বলেন, সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে আমি শিশু শ্রেণীতে পড়েছি। সেসময়ই স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। আমার ছোট ভাইবোনরা এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পাশের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। আমাদের গ্রামের স্কুলটি চালু করা হলে শিশু শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশুনা করতে পারতো। অনেক শিশু দূরের স্কুলে যেতে চায় না। ধীরে ধীরে অনেকেই পড়াশুনা বাদ দিয়ে মা-বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে যাচ্ছে।

পতিরাজপুর আদিবাসী পল্লীর শুভ্রত সরকার আকাশ বলেন, এ পল্লীর মানুষেরা অত্যন্ত আর্থিক কষ্টে দিনাতিপাত করে। কৃষি জমিতে দিনমজুরি ছাড়া আর কোন কর্ম নেই। এখানকার মানুষদের নুন আনতে পানতা ফুরায়ের মতো অবস্থা। শিশুরা পড়াশুনার করবে ক্যামনে। এরপরও নিজস্ব পল্লীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। পাশ্ববর্তী এলাকার বিদ্যালয়ে গিয়ে সবাই পড়াশুনা করতে চায় না। এ আদিবাসী পল্লীর একমাত্র আমি ২০১৭ সালে এসএসসি পাশের পর কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতার কারণে পড়াশুনা হয়নি। এখন আমি অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করি।

মারমীর বন্ধ হয়ে যাওয়া সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটির শিক্ষিকা আগনেশ মাধবী বিশ্বাস বলেন, অর্থের অভাবে আমাদের একমাত্র শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে সরকারি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এগিয়ে আসেনি। এখানকার শিশুদের এক দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। এতে অনেক শিশু শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়েছেন।

ঈশ্বরদী প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে মাঠ সমন্বয়কের চাকরি করছেন মারমী আদিবাসী পল্লীর সমর বিশ্বাস। চাকরির পাশাপাশি আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করেন। সমর বিশ্বাস বলেন, আদিবাসী পল্লীর সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষা কেন্দ্র পড়াশুনার হাতেখড়ি হয়েছিল। এরপর নাটোরের বনপাড়া মিশন স্কুল থেকে নবম শ্রেণী পাসের পর বাঁশেরবাদা স্কুল থেকে এসএসসি, বাঁশেরবাদা কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএসএস পাশ করেছি। আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা, ভাষা ও জীবনযাত্রা উন্নয়নে আমি সাধ্যমতো কাজ করার চেষ্টা করি। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, সেন্ট ফিলিপস শিশু শিাকেন্দ্র ছিল বলেই আমরা পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছিলাম। এখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেই পরবর্তীতে আরো শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু এ শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত। কারণ এখনো আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষাগ্রহণের হার অত্যন্ত কম। নিজ পল্লীতে স্কুল থাকায় বেশির ভাগ শিশুই স্কুলে আসতো। কিন্তু এখন দূরের স্কুলে যেতে সবাই যেতে চায় না। অভিভাবকরাও শিশুদের দূরে স্কুলে না পাঠিয়ে সঙ্গে করে কাজে নিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে এভাবে চলতে থাকলে শিশুরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হবে।

মারমী আদিবাসী পল্লীর প্রধান বার্নাট বিশ্বাস বলেন, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের শিশুদের খ্রিস্ট্রান ধর্ম ও নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। পাশের গ্রামের স্কুলে শিশুরা পড়াশুনা করতে যায় সেখানে আমাদের ধর্ম, ভাষা সম্পর্কে শিক্ষার কোন সুযোগ নেই। নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ স্কুলটি পুনরায় চালুর প্রয়োজন।

দাশুড়িয়া ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম মাঝি বলেন, মারমী আদিবাসি পল্লীর শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ পল্লীর শিশুদের পড়াশুনা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আদিবাসি শিশুরা এক থেকে দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পাশ্ববর্তী গ্রামের স্কুলে যাচ্ছে। অনেক শিশুই দূরের স্কুলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে তারা শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়ছে। স্কুলটি বন্ধের পর তৎকালীন সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসারের নিকট একাধিকবার ধর্ণা দিয়েও স্কুলটি চালুর ব্যাপারে কোন আশ্বাস পাওয়া যায়নি। এমনকি কারিতাস এনজিও ও খ্রিষ্ট্রান মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এতেও কোন কাজ হয়নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, আমি যোগদানের পর আদিবাসী পল্লির শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত কেউ কিছু জানায়নি। এই প্রথম শুনলাম এখানে একটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ রয়েছে বিস্তারিত খবর নিয়ে জানার চেষ্টা করবো।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

error: Content is protected !!