রবিবার , ১৯ মার্চ ২০২৩ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

থাইল্যান্ডে রপ্তানি হচ্ছে ঈশ্বরদীর কুঁচিয়া মাছ

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
মার্চ ১৯, ২০২৩ ২:৩৪ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের মানুষ কুঁচিয়া মাছ চিনলেও খেতে বেশিরভাগই পছন্দ করেন না। কিন্তু বিদেশে এর অনেক চাহিদা রয়েছে। আবার বাংলাদেশের কোথাও কোথাও এর জনপ্রিয়তা আছে। কুঁইচা, কুইচ্চা, কুঁচে, কুঁচো ইত্যাদি নামে বিভিন্ন এলাকায় মাছটি পরিচিত। ঈল প্রজাতির, অনেকটা বাইন মাছের মত এ মাছটি সাধারণত পুকুর, হাওর, বাঁওড়, খাল বা ধানক্ষেতের তলদেশে বাস করে। মাটিতে গর্ত করেও অনেক সময় কুঁচিয়া বসবাস করে। একটি কুঁচিয়ার সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। একজন শিকারি দিনে দুই থেকে আট কেজি পর্যন্ত কুঁচিয়া শিকার করতে পারেন। নভেম্বর থেকে জুন কুঁচিয়া ধরার উপযুক্ত মৌসুম। এই কুঁচিয়া মাছই এখন ঈশ্বরদীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একাংশ মানুষের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসে বলা হয়েছে, সাপের মতো দেখতে এ মাছ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। শারীরিক দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, বাতজ্বর, পাইলসের মতো রোগ সারাতে এটি মহৌষধের মতো কাজ করে।

ঈশ্বরদীর কুঁচিয়া এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ঈশ্বরদী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের অন্যতম পেশা কুঁচিয়া শিকার। বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় এ পেশার সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যারা জড়িত তাদের জন্য আর্শীবাদ। কুঁচিয়া বেচাকেনার জন্য কালিকাপুর বাজারে গড়ে উঠেছে একটি আড়ৎ। এখান থেকে সপ্তাহে দু’দিন ঢাকায় পাঠানো হয়। এ কুঁচিয়া ঢাকা থেকে চীন, থাইল্যান্ড, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।

জানা যায়, কুঁচিয়া শিকারি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের প্রধান পেশা ছিল পশু শিকার। পাশাপাশি তারা করতেন ভুট্টার চাষ। ভুট্টার ভাত, বুনো শূকর আর খরগোশের মাংস ছিল নিত্যদিনের খাবার। বন-জঙ্গল কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রাণী শিকার এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে পেশার বদল হয়েছে। কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ এখন তাদের প্রধান পেশা। পাশাপাশি কুঁচিয়া ও কচ্ছপ শিকার করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।

জলাশয়ে এখন কচ্ছপও খুব একটা দেখা যায় না, প্রায় বিলুপ্তির পথে। কুঁচিয়া শিকার করেই এখন জীবিকা নির্বাহ করছে ঈশ্বরদীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩৫-৪০ পরিবার। অন্যরা কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। ঈশ্বরদী উপজেলার পতিরাজপুর, মাড়মী, ফরিদপুর, সরইকান্দী, গোপালপুরসহ পার্শ্ববর্তী ক্ষিদিরপুর, রাজাপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে কুঁচিয়া মাছ ধরা হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, শুধুমাত্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হওয়ার কারণে সম্মানজনক কোনো পেশায় আমরা কাজ করার সুযোগ পাই না। বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে এই পেশা বেছে নিছি। আমাদের জীবন-জীবিকার আশীর্বাদই হলো কুঁচিয়া মাছ শিকার।

দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী এলাকার দিলীপ বিশ্বাস দশ বছর ধরে কুঁচিয়া শিকার করছেন। আগে নিজেরা খাওয়ার জন্য ধরলেও এখন পেশা হয়ে গেছে। কপাল ভালো হলে কোনো কোনো দিন ৭-৮ কেজি পর্যন্ত কুঁচিয়া ধরেন।

তিনি বলেন, কুঁচিয়ার বাজারদর এক থাকে না। প্রতি কেজি ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। করোনার আগে ২৫০ টাকা কেজি ছিল। এখন ২০০ টাকার বেশি দাম পাওয়া যায় না।

কুঁচিয়া শিকারি জ্যাকব বিশ্বাস বলেন, পূর্বপুরুষেরা বুনো শূকর, খরগোশ, বনবিড়াল, কচ্ছপ শিকার করতো। এখন বন-জঙ্গল নেই। শুধু কুঁচিয়া মাছ শিকার করি। কারেন্ট জালের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় একসময় এটাও বিলুপ্ত হবে। বাচ্চা কুঁচিয়া কারেন্ট জালে আটকে মারা যাচ্ছে।

জ্যাকব বিশ্বাস বলেন, বছরে ৭-৮ মাস কুঁচিয়া শিকার করে বসে থাকতে হয়। অথবা অন্য কোনো কাজ খুঁজে নিতে হয়। কুঁচিয়া শিকার করে দিন কেটে যাচ্ছে। মাসে গড়ে ১২-১৫ হাজার টাকা আয় হয়।

ঢাকার উত্তরার ইনারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইয়ারুল ইসলাম বলেন, বার্নাট দাস নামের একজন ঈশ্বরদী থেকে কুঁচিয়া পাঠান। তার মতো আরও অনেকের সঙ্গে আমাদের কুঁচিয়া মাছের ব্যবসা রয়েছে। মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় এসব কুঁচিয়া চীন, জাপান ও থাইল্যান্ড রপ্তানি হচ্ছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।

ঈশ্বরদী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান খান বলেন, কুঁচিয়া শিকারিরা এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করেননি। বাণিজ্যিকভাবে চাষের বিষয়টিও তাদের কেউ জানাননি। কেউ এ বিষয়ে আগ্রহী হলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ