তন্ময় দেবনাথ, রাজশাহী : রাজশাহীর গাছে গাছে এখন দেখা দিচ্ছে বাড়ন্ত আম। ডালে ডালে ঝুলতেও শুরু করেছে। তবে এবার আমের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। আম চাষিরা বলছেন, সব গাছে নতুন পাতা, মুকুল-গুটি নেই। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ রকম হয়নি। কৃষি বিভাগও একই কথা বলছে। তবে কৃষি গবেষকরা বলছেন, আম কম হলেও আকার বড় সাইজের হবে এবং উৎপাদনে লক্ষ্য পূরণ হবে।
এ অঞ্চলের আমচাষিরা যারা গাছে হরমোন ব্যবহার করেছেন, তাদের গাছে মুকুলের ব্যাপক সমারোহ ঘটেছে। গবেষকেরা বলছেন, হরমোন দেওয়ার পাশাপাশি গাছকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিতে হবে, না হলে গাছই মারা যাবে।
রাজশাহী আম গবেষণাকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়। ফলন হয়েছিলো ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন।
রাজশাহীর প্রধান আম উৎপাদনকারী এলাকা বাঘা ও চারঘাট উপজেলা। এই দুই উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আম চাষিরা বলছেন, সব গাছে গাছে নতুন পাতা, মুকুকের আধিক্য কম। তারা বলছেন গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ রকম হয়নি।
রাজশাহী আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিম উদ্দিন বলেন, এবার আমের মুকুল কম, তাই আম বড় হবে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। হরমোনের ব্যবহার সম্পর্কে আলিম উদ্দিন বলেন, ২০২০ সালের মার্চ মাসে সরকার আম চাষের জন্য হরমোন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এর মূল নাম ‘প্যাকলোবুট্রাজল’। বাংলাদেশে ‘কালটার’ নামে এর বাজারজাতকরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হরমোন ব্যবহারের নির্ধারিত মাত্রা রয়েছে। মাত্রা অনুযায়ী প্রতি বর্গমিটারে গাছের গোড়া থেকে এক ফুট দূরে রিং করে চার মিলিলিটার ওষুধ পাঁচ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। দেওয়ার আধা ঘণ্টা পর সেচ দিতে হবে। পর্যাপ্ত খাবার দিতে হবে, না হলে দুই-তিন বছর পর গাছটি মারা যেতে পারে। আট-নয় বছরের ছোট গাছে হরমোন ব্যবহার করা যাবে না।
আমবাগানের মালিকেরা বলেন, সাধারণত আমবাগানে এক বছর ভালো মুকুল এলে পরের বছর কম আসে। যে বছর বেশি মুকুল হয়, সেই বছরকে ‘অন ইয়ার’ বলা হয় এবং যে বছর কম হয়, সে বছরকে ‘অফ ইয়ার’ বলা হয়। আমের নতুন নতুন জাত আসার ফলে এবং পরিচর্যার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে অন/অফ ইয়ারের ধারণা পাল্টে গেছে।
এখন গাছে আমের ভালো মুকুল আসে। তবে তুলনামুলকভাবে বেশ কয়েক বছর পর রাজশাহীতে আমের মুকুল কম এসেছে। গাছে গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে। তাই আগামী বছর ভালো মুকুল আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যারা এবার গাছে হরমোন ব্যবহার করেছেন, তাঁদের গাছে অনেক মুকুল এসেছে।
বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন. তার বাগানের বড় গাছে হরমোন ব্যবহার করেছিলেন। তার গাছে ভালো আম এসেছে। আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়ম মেনে শুধু বড় গাছগুলোতে তিনি হরমোন ব্যবহার করেছিলেন। এতে ভালো মুকুল হয়। এখন আমের গুটি বের হচ্ছে।
বাঘার আম বাগান মালিক আসাফুদ্দৌলা জানান, এবার গাছে মুকুল কম এসেছে। এলাকার মাত্র ৪০ শতাংশ গাছে আমের মুকুল এসেছে। গত বছর যেসব গাছ ফাঁকা ছিল, এবার সেগুলোতেই শুধু মুকুল এসেছে। এদিকে রাজশাহীর গাছে গাছে বেড়ে উঠছে আমের গুটি। বাগান ইজারা নেয়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর আগেরবারের মতো আমের উৎপাদন হবে না। তবে এখনও গাছে যে আম আছে তা শেষ পর্যন্ত টিকলে খুব বেশি ক্ষতিও হবে না।