রবিবার , ১৫ মে ২০২২ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. নির্বাচন

মোবাইল মহামারিতে শিক্ষার্থীরা!

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
মে ১৫, ২০২২ ৫:৫২ অপরাহ্ণ
মোবাইল মহামারিতে শিক্ষার্থীরা!

ইন্টারনেটে ও গেমসে দিনপার, লেখাপড়ায় অমনোযোগী


* দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
* টিকটক, লাইকির নামে ভাইরাল হওয়ার অপচেষ্টা!
* উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা, সচেতন হওয়ার তাগিদ শিক্ষাবিদদের


আবদুল হাই তুহিন : অর্ক শাহরিয়ার। রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি মাধ্যমের প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সবে তার শিক্ষা জীবন শুরু। এ বয়সে তার হেসে খেলে আর আনন্দ উল্লাস করেই দিন কাটাবার কথা। কিন্তু সে সারাক্ষণ ঘরের কোনে বসে মোবাইল ফোন নিয়েই ব্যস্ত। বাসার কারোর সাথে তেমন একটা কথাও বলে না। নিজের মতো করেই থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু আবার কেউ কিছু বললেই সামান্যতে চটে যায়। জানা যায়, কেবল স্কুলের সময়টি বাদ দিয়ে তার সর্বক্ষণেই সঙ্গী মোবাইল ফোন। এমনকি খাবার খাওয়ার সময়ও তাকে মোবাইল ফোনে চোখ রাখতে দেখা যায়। সারাক্ষণ মোবাইল ফোনে পাবজিসহ নানা গেমসে দিন কাটে তার। এ নিয়ে মা-বাবা শাসন করলেও কোন কাজে আসেনি।

আশরাফুন নাহার। রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ঘুম, খাওয়া দাওয়া বাদে বাকি সময় তার মোবাইল ফোনেই কাটে। তার ব্যস্ততা টিকটক ও লাইকি নিয়ে। সারাদিন বন্ধু বান্ধবদের সাথে নিয়ে টিকটক ভিডিও নির্মাণেই তার সব আনন্দ। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে হওয়ায় তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেশি। রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। ভাইরাল হওয়ার নামে অশ্লীলতার ভাবনাও জেঁকে বসেছে তার মনে। তার উগ্র চলাফেরা পরিবার পরিজনকে বিব্রত করছে রীতিমতো। মেয়েকে শাসন করেও কাজে আসেনি বলে জানান ব্যবসায়ি পিতা। কেবল অর্ক ও আশরাফুন নাহারই নয় সারাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থা এমনই। তারা মোবাইলের নেশায় আসক্ত। তাদের অবস্থা সাদৃশ্যে মনে হয় এ যেন এক ‘মোবাইল মহামারি’। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ঘুম ঘুম ভাব পরিলক্ষিত হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।


মোবাইল নিয়ে বুদ হয়ে থাকা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। সরকারের দায়িত্বশীলদের উচিত শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা। অনেকে এমনটাই বলছেন। তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, আধুনিক ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষার্থীরা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে এর প্রযুক্তিগত সুবিধা নিশ্চিত করবে। অভিভাবকদের উচিত হবে সন্তান মোবাইল ফোনটি দিয়ে কি করে, কার সাথে যোগাযোগ করে এবং কি কনটেন্ট দেখে তা মনিটরিং করা।

এক অভিভাবক নাম না বলা শর্তে আমাদের ঈশ্বরদী ডটকমকে বলেন, সন্তান সারা রাত ঘুমায় না। ফেসবুক ও ইন্টারনেট নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। কোনো পড়াশোনা করে না। এমনকি কোচিংয়েও যায় না। সন্তান এখন বড় হচ্ছে। তাকে কি আর শারীরিক ভাবে মারা যায়? মোবাইল ফোন এখন মহামারী হয়ে উঠেছে। সরকারের উচিত শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে প্রজ্ঞাপন জারি করা। এ প্রসঙ্গে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা: প্রাণ গোলাপ দত্ত শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আসক্তি বিষয়ে সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, মোবাইল ফোন শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রশ্মি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ভীষণ ক্ষতি করে। যেসব শিশু দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘণ্টা মোবাইল ফোনে ভিডিও গেম খেলে, খুব অল্প বয়সে তারা চোখের সমস্যায় পড়বে। এছাড়াও মাথা ব্যাথা, পিঠে ব্যথা এমনকি তার ব্রেনের কোষগুলোকেও ভীষণভাবে অরক্ষিত করে ফেলে। এতে একজন শিক্ষার্থী স্টোক পর্যন্ত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তির কারণে খাওয়া দাওয়ায় একটা অনীহা ভাব চলে আসে। তিনি আরো বলেন, সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন মোবাইল ফোনকে সিগারেটের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

ইউনিসেফের তথ্যানুসারে, বিশ্বে প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একজন হচ্ছে শিশু। (বাংলাদেশে ১৮ বছর পর্যন্ত সবাই শিশু) প্রতিদিন ১৭৫০০০ অর্থাৎ প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু নতুন করে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। স্মার্টফোনে আসক্ত একজন শিক্ষার্থী ছয় থেকে আট ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ব্যয় করছে স্মার্টফোনের পিছনে। একজন সাধারন মানুষ কোনো বিষয়ে গড়ে ১২ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। কিন্তু একজন স্মার্টফোনে আসক্তির জন্য সেই সংখ্যা গড়ে ৫ মিনিটেরও কম সময়। একটি জরিপ থেকে জানা গেছে যে, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয় তাদের তুলনায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইলফোন নিষিদ্ধ তাদের ফলাফল ৬ শতাংশ ভালো। স্কুল শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেখা যাচ্ছে, ক্লাস ফাইভ-সিক্স-সেভেনের অনেক শিক্ষার্থীর হাতে এখন দামি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন! এরা প্রায় সব সময়ই অনলাইনে থাকে। এদের বেশিরভাগেরই দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস। কারণ এরা গভীর রাত পর্যন্ত অনলাইনে সময় কাটায়। অনেকে আবার নিষিদ্ধ অ্যাপসে ঢু মারছে রীতিমতো। টিকটক ও লাইকিতে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে অনেকে অশ্লীলতায় মেতে উঠেছে। এতে তাদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মারাÍকভাবে। নষ্ট হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পরিবারের উচিত টিনএজ ছেলেমেয়েদের বিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা। শিক্ষার্থীদের এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রমে উৎসাহিত করা। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় উৎসাহ দেয়া। সর্বক্ষণ ঘরে থেকে ফোন বা ল্যাপটপে-অনলাইনে সময় ব্যয় করার বদলে বাইরের মুক্ত বাতাসে চলাফেরায় উদ্বুদ্ধ করা। ক্লাব, সভা-সমিতির কার্যক্রম ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত করা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, শিক্ষাবিদ আ.আ.ম.স আরেফীন সিদ্দিক সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, ডিজিটাল যুগে শিক্ষার্থীরা মোবাইলের মাধ্যমে তাদের পাঠদান করা সহ প্রযুক্তির নানা কাজ করতে পারে। একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৬/৭ ঘণ্টা (ছুটির দিন বাদে) সময় কাটে শিক্ষকদের কাছে, বাকী ১৭/১৮ ঘণ্টায় শিক্ষার্থী কী করে, কোথায় যায়, কী খায়, কাদের সাথে মেশে এ বিষয়গুলো খুব ভালভাবে লক্ষ রাখতে হবে অভিভাবকদেরই। এদিকে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা বাড়াচ্ছে মোবাইল ফোন। কেবল তাই নয় তাদের মাথা ব্যথা, হাত-পা ব্যথা, ঘুম ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা। শতকরা ৫২ ভাগ শিক্ষার্থীই মনে করছে তারা মানসিকভাবে বিষন্ন। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া কিংবা অল্প সময়ে রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে। সম্প্রতি দেশের ২১টি জেলায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পড়ুয়া বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম, মাদরাসা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এক হাজার ৮০৩ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা উইলি’র হেলথ সায়েন্স রিপোর্ট জার্নালে গত ৫ অক্টোবর প্রকাশিত হয় এই গবেষণার ফলাফল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, ইউএসটিসি ও সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন। এ প্রসঙ্গে সামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন,শিক্ষার্থীরা এন্ড্রয়েড ফোনের উপকারিতা বাদ দিয়ে সারারাত-দিন নিষিদ্ধ অ্যাপ দেখা এবং পাবজিসহ নানা গেমসে নিমজ্জিত রাখে নিজেকে। ফলে অধিকাংশ সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঘুমায়। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোনিবেশ করতে পারে না। এমনিতেই পরীক্ষায় খারাপ ফল নিশ্চিত হয়। অভিভাবকদেরই উচিত পরিপক্ক বয়স হওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন না দেয়া। তাদের যোগাযোগের প্রয়োজন হলে তারা তাদের অভিভাবকদের ফোন দিয়ে যোগাযোগ করবে বলে মন্তব্য করেন দেশ সেরা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তিনি আরো বলেন, মোবাইল ফোনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আগামীর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

অনেক বাবা মাকে ও দেখি তারা শখ করে সন্তানদের নামী দামি ব্রান্ডের মোবাইল ফোন কিনে দেয়। সন্তান কার সাথে মিশে, মোবাইলে কার সাথে কথা বলে, কি গেমস খেলে আর নিষিদ্ধ কোন কিছুতে ঢু মারে কিনা অভিভাবককে এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

আপনার জন্য নির্বাচিত
error: Content is protected !!