জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছেন ঈশ্বরদীর কৃতি সন্তান অধ্যাপক ডা: কামরুল ইসলাম। তিনি চিকিৎসাবিদ্যা ক্যাটাগরিতে মনোনিত হন।
আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনৈতিক) জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার।
সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রামের স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
সহানুভূতি ও মমতার সম্পর্ক
মানবসেবার মহান ব্রত থেকেই চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। পেছনে ছিল মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পিতার অনুপ্রেরণা। সেই পথ ধরে নিজের পেশাকে কেবল সামাজিক ও আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভের সিঁড়ি বানাননি তিনি। বরং দেশের দরিদ্র কিডনি রোগীদের জন্য নামমাত্র মূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন ও মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্য তৈরি করেছেন বিশেষায়িত এক প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি ১ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক ছুঁয়েছেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠান শ্যামলীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস (সিকেডি) অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল। গরীব রোগীদের কম মূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন ও চিকিৎসার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৪ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন কামরুল ইসলাম।
চলমান করোনা মহামারির মধ্যে গণস্বাস্থ্য কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার ছাড়া যখন সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসসহ কিডনি রোগীদের অন্য সেবা কার্যক্রমগুলো বন্ধ ছিল, তখনও সিকেডি হাসপাতাল তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। মহামারির দেড় বছরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ২৫০টির বেশি কিডনি। বর্তমানে এই হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে ৪টি করে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। যা দেশের অন্য যেকোনো হাসপাতালের তুলনায় বেশি।
নির্ধারিত ন্যূনতম খরচ বাদে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বিশেষজ্ঞ সার্জনের কোনো ফি নেন না অধ্যাপক কামরুল। রোগীদের ফলোআপ পরীক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ ও রিপোর্ট দেখার ফিও নেওয়া হয় না তার হাসপাতালে। এ ছাড়া, খরচ কমাতে কিডনি সংরক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা এক ধরনের দামি তরলের বিকল্প তৈরি করেছেন তিনি। এভাবে নিজ পেশার মাধ্যমে সমাজের নিম্নআয়ের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার অনন্য নজির স্থাপন করে চলেছেন এই অধ্যাপক।
সেই সঙ্গে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যকার পারস্পরিক বোঝাপড়া, নির্ভরতা, বিশ্বস্ততা ও মমত্ববোধকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছেন তিনি।
ব্যক্তিজীবন
অধ্যাপক কামরুল ইসলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ১৯৮২ সালে তখনকার ৮টি মেডিকেল কলেজের সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস অব এডিনবার্গ থেকে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা আমিনুল ইসলাম ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার ‘অপরাধে’ স্থানীয় রাজাকার ও বিহারীরা তাকে হত্যা করে।
অধ্যাপক কামরুল ১৯৯৩ সালে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। প্রথমবারের মতো সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজ করেন ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রতিষ্ঠা করেন সিকেডি হাসপাতাল।
তিনি ৩ কন্যা সন্তানের জনক।