রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো প্রভাব পড়েনি দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। থেমে থাকেনি এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কোনো ধরনের কাজ। যার ফলে পরিকল্পনামাফিক গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫১.৫০ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার ৭১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডির) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
২৪০০ মেগাওয়াটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যয় ধরা হয়েছে মোট লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। বাকি ব্যয় বহন করবে সরকার। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক শওকত আকবর বলেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনায় দেখা যায়, যুদ্ধের কোনো প্রভাব পড়েনি এই প্রকল্পে। আমাদের কাজ থেমে নেই। প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে সার্বিক অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ইউনিটে কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। আমাদের এখনো যেসব কাজ বাকি, সেগুলো করছি ঠিকমতো। আশা করছি, সঠিক সময়ে বরাদ্দকৃত অর্থে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব। ’
ফাস্ট ট্র্যাক এই প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সব সময় আমাদের নজর আছে। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে মেট্রো রেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশও খুলে দেওয়া হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ভালো। সব মেগাপ্রকল্পের কাজই এগিয়ে চলছে। ’
আইএমইডির তথ্য মতে, মেট্রো রেল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ খরচ হবে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ার সঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটির মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাড়তি অংশ যোগ হওয়ায় এই ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৯ হাজার ৬৯২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৯.৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশ। এ ছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। গত জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ২৩৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬১.৭৬ শতাংশ। তা ছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬১ শতাংশ।
এ ছাড়া মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। গত জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ৬৩৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৪৯.৪৪ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬২.৬ শতাংশ। প্রকল্পটি এখন মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম নামে অবিহিত করা হয়। একই সঙ্গে ১২০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ১২টি প্রকল্প যুক্ত রয়েছে।
এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপারথার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০০৯ সালের জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়। গত জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮২.০৫ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৫.২৫ শতাংশ।