ঈশ্বরদীতে আগাম ‘অটো শিম’ চাষে করে কৃষকরা প্রতিবারই লাভবান হন। এবারো লাভবান হওয়ার আশায় স্বপ্নের জাল বুনছেন তারা। ‘অটো শিমে’র পরিচর্যায় চাষিরা মহাব্যস্ত। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে চাষিরা এখন শিমের ক্ষেতে ফুল ও ফলের পরিচর্যায় সময় পার করছেন।
মুলাডুলির যে দিকে দু’চোখ যায় মাঠের পর মাঠ জুড়ে চোখে পড়বে শিমের ক্ষেত। শিমের লতা-পাতার সবুজ সমারোহের সাথে গোলাপী ও সাদা ফুল পথচারীদের নজর কাড়ছে। এরই মধ্যেই কিছু কিছু গাছে শিম ধরতে শুরু করেছে। আগাম অটো শিমে লাভবান হওয়ার আশায় স্বপ্নে বিভোর ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষকরা।
সোমবার সরেজমিনে মুলাডুলি ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দেশের অন্যতম শিম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে খ্যাত জোরেসোরেই চলছে আগাম শিম চাষ।
আড়াই বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছেন মুলাডুলির বাঘহাচলা গ্রামের চাষি হোসেন আলি।পাশে জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষ।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়। বৃষ্টির পানি থেকে শিম গাছকে রক্ষা করতে জমিতে ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে ঢিবি বা বিট। উঁচু বিটে তারা অটো শিম চাষ হয়েছে। ‘অটো’ জাতের শিম গাছ ইতিমধ্যেই মাচায় উঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই পুরোদমে এসব শিম বাজারে উঠবে। আগাম অটো শিম চাষে প্রতিবছরই সফলতা পায় এখানকার চাষিরা। যেকারণে প্রতিবছরই শিমের আবাদ বাড়ছে। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল সবজির বাজার। মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাাক শিম ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, বরিশালসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে চালান হয়।
মুলাডুলির বাঘহাচলা গ্রামের চাষি হোসেন আলি জানান, আড়াই বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘাতে খরচ হয় ৪০-৪৫ হাজার টাকা। ভালো আবাদ হলে বিক্রি হবে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি জানান, গতবছর আগাম জাতের অটোশিম বাজারে প্রথম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে।
বেতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আরস খাঁ জানান, ফলন ভালো হলে আর কৃষক ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হবে। আগাম জাতের শিম চাষে ব্যাপক লাভবান হয়েছে এখানকার কৃষকরা। শিম চাষে উৎসাহ বাড়ছে কৃষকদের।
মুলাডুলি দৈনিক সবজি বাজার সমিতির উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, আগাম জাতের শিম বেচাকেনা শুরু হয়নি। আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যেই আগাম জাতের শিম বাজারে আসবে।
মুলাডুলি ইউপি’র কৃষি উপ-সহকারি কর্মকর্তা আলিউজ্জামান জানান, অটো, ঘৃত কাঞ্চন ও রূপসী নামের আগাম জাতের শিম এখানে চাষাবাদ বেশি হয়। আগাম জাতের শিমে চাষিরা লাভবান হলেও এতে সার ও কীটনাশক মাত্রা অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার জানান, দেশের সবচেয়ে বেশি শিম এখানে চাষাবাদ হয় হয়। রাজধানীর বাজারে আগাম যে শিম পাওয়া যায় সেটি উৎপাদন হয় ঈশ্বরদীতে। ১,১৩০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। এরমধ্যে শুধুমাত্র মুলাডুলি ইউনিয়নেই ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়। ২০২১ সালে এখানে ৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শিম বিক্রি হয়েছে। আগাম শিম চাষে কৃষকরা অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে যা স্বাস্থ্যর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করে কিভাবে আগাম শিম উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন :