পাবনার ঈশ্বরদীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম সারির একটি চিকিৎসা কেন্দ্র। ফলে এই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে প্রথম সারির একটি সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রয়েছে একমাত্র এক্সরে কক্ষ। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের। কোন রোগীর এক্সরের প্রয়োজন হলে তাকে বিশেষ স্বাক্ষরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। এতে দীর্ঘ সময় ও বাড়তি টাকা দুটোই দিতে হচ্ছে চিকিৎসা গ্রহীতাদের। শুধু এক্সরে কক্ষই না জনবল সংকট ও অপারেশন থিয়েটারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বিকলসহ নানা সিন্ডিকেটে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা তো ব্যাহত হচ্ছেই সেই সঙ্গে রোগীদেরও পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি।
জানা গেছে, ৫০ শয্যায় উন্নীত করে ২০১১ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হয়। স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১২টি জাতীয় পুরস্কার ও পদক পেয়েছে। জরুরি প্রসূতিসেবা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি এই পুরস্কারগুলো অর্জন করে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের অনেকেরই এক্সরে প্রয়োজন হয়। তাতে হাসপাতালটির এক্সরে কক্ষ বন্ধ থাকায় বাহিরের প্রাইভেট হাসপাতালে প্রায় ৩০০/৪০০ টাকা বেশি দিয়ে এক্সরে করতে হচ্ছে। এদিকে হাসপাতালে এক্সরে কক্ষে পাঁচ বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে দেওয়া একটি মেশিনে প্রাথমিক এক্সরে কাজ করা হতো। পরে সেই মেশিন বিকল হওয়াতে বাহিরে থেকে ফ্লিম কিনে তা চলমান রাখা হয়েছিলো। পরবর্তীতে দুই বছর যাবত সেটাও বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র যক্ষা রোগীদের এক্সরে ছাড়া কোন নরমাল এক্সরের ব্যবস্থা নেই। এতে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়ছেন রোগীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটির এক্সরে কক্ষের দরজাটি তালাবদ্ধ এবং দরজার সঙ্গে ছোট কাগজে লিখা রয়েছে “শুধুমাত্র যক্ষা রোগীর এক্স-রে কার্যক্রম চলমান, যক্ষা রোগী ব্যাতিত অন্যান্য এক্সরে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে”। এসময় এক্সরে কক্ষের সামনেই এক্সরে করতে আসা কয়েকজন রোগী অপেক্ষা করছিলেন। তখন কথা হয় সাঁড়া গোপালপুর এলাকার মোছাঃ মাহিদা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে বুকে ব্যাথা করে। ডাক্তারের পরামর্শ নিলে তিনি যক্ষা রোগের আশঙ্কা করে এখানে এক্সরে করতে পাঠিয়েছে। কিন্তু ৩০ মিনিট যাবত দাঁড়িয়ে আছি এক্সরে কক্ষ তালাবদ্ধ।
পৌর শহরের মোঃ ইব্রাহিম মিয়া নামে একজন বলেন, একটি সরকারি হাসপাতাল কিন্তু অন্যান্য এক্সরে হয়না যদিও যক্ষা রোগীর এক্সরের কথা উল্লেখ রযেছে তবুও কয়েক ঘন্টার জন্য সেটা। অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করেও এক্সরে কক্ষটি কেউ খুলেনি।
মাজার এক্সরে করতে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে যাচ্ছিলো মোছাঃ আফরোজা আক্তার নামে একজন রোগী তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রথম সারির একটি হাসপাতাল কিন্তু এক্সরে বন্ধ। যেখানে ২০০ টাকায় এক্সরে করার কথা সেখানে বাহিরে গিয়ে ৬০০ টাকা দিয়ে তা করতে হচ্ছে।
তবে এসব বিষয় নিয়ে আজ সোমবার(১৩ জানুয়ারি) সকাল ১১ টার দিকে পাবনা জেলা ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ড্যাব) কর্মকর্তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে খুব দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এসময় পাবনা জেলা ড্যাবের সাধারন সম্পাদক ডা.আহমেদ মোস্তফা নোমান বলেন, আমরা সাধারন মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা পৌছে দিতে ও দায়িত্বরত চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একতাবদ্ধ। আজকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিদর্শন শেষে বেশ কিছু ত্রুটি আমরা পেয়ে খুবই হতাশ হয়েছি। বিশেষ করে এক্সরে কক্ষটা চালু করা খুবই দরকার। এটার জন্য শুধু আমরা নয় সর্বমহলের সহায়তা প্রয়োজন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আলী এহসান বলেন, আমাদের এই হাসপাতালে অবকাঠামোগত অনেক সমস্যায় রয়েছে। এক্সরে কক্ষে শুধুমাত্র যক্ষা রোগীদের এক্সরে করা হচ্ছে। অন্যান্য এক্সরে করার মত মূল মেশিন এখানে নাই যার কারনে এমন সমস্যা হচ্ছে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়ে রাখছি, দেখা যাক কি হয়। আমরাও চাই এই হাসপাতালে যেন ত্রুটিবিহীন সেবা পাই সাধারন মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনকালে আরো উপস্থিত ছিলেন পাবনা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা.সিরাজুল ইসলাম শুভ, পাবনা সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স সার্জন ডা. হাসানুজ্জামান টুটুল, পাবনা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও ড্যাব সদস্য ডা.মোঃ মশিউর রহমান মাসুদ, ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডা.শাহেদুল ইসলাম শিশিরসহ অন্যান্যরা।