রবিবার , ৬ অক্টোবর ২০২৪ | ৯ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

বন্ধ হওয়ার পথে
২০ বছরেও পূর্ণতা পায়নি ঈশ্বরদীর বেনারসিপল্লি, চাষাবাদ হচ্ছে সবজি

প্রতিবেদক
আমাদের ঈশ্বরদী রিপোর্ট :
অক্টোবর ৬, ২০২৪ ১০:২৬ অপরাহ্ণ

ঈশ্বরদীতে বেনারসি তাঁত শিল্পের ইতিহাস প্রায় শত বছরের। পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টির পর ঈশ্বরদী পৌর শহরের ফতেহমোহাম্মদপুরে বসতি গড়ে তুলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের অবাঙালি বেনারসি কারিগররা। কারিগররা বেনারসি-কাতানসহ অভিজাত শাড়ি বুননের কাজ শুরু করেন। নানা সংকট ও সমস্যার মধ্যেও প্রায় দুই শতাধিক বেনারসি তাঁতি তাদের পূর্বপুরুষদের এ পেশা এখনো ধরে রেখেছেন।

ঈশ্বরদীর বেনারসি তাঁতশিল্পকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগে ফতেহমোহাম্মদপুর এলাকায় গড়ে তোলা হয় বেনারসিপল্লি। সুতা, চুমকিসহ তাতসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি ও ভারতীয় বেনারসিতে দেশীয় বাজার সয়লাবসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রতিষ্ঠার ২০ বছরেও পূর্ণতা পায়নি বেনারসিপল্লি। পল্লির বিশাল এলাকা কেবল ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে ভরে আছে। বেনারসিপল্লি এখন বন্ধের পথে। পেশা বদলেছেন পল্লির কারখানায় কর্মরত অনেক তাঁতশ্রমিক।

জানা যায়, ২০০৪ সালে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ফতেহমোহাম্মদপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ একর জমির ওপর গড়ে তোলেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেনারসিপল্লি। ২০ বছরে প্লটের কিস্তি পরিশোধের সুবিধার্থে ৯০ জন তাঁতিকে ৯০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭০টি ৩ শতাংশের ও ২০টি ৫ শতাংশের প্লট। ৯০টি প্লটের মধ্যে মাত্র ৭টি প্লটে কারখানা স্থাপন করা হলেও এখন চালু রয়েছে তিনটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কারখানা স্থাপনের জন্য ইটের দেয়াল গাঁথুনি দেখা গেলেও সেগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। বেশিরভাগ প্লটে কারখানা গড়ে না ওঠায় পল্লি এখন ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। বেনারসিপল্লির দেখভালের জন্য শুধু একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ নেই। এই কর্মকর্তা বেনারসিপল্লির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আটঘরিয়া উপজেলার তাঁতিদের ঋণ বিতরণ ও আদায়ের কার্যক্রম দেখভালের বাড়তি দায়িত্ব পালন করছেন।

বরাদ্দকৃত প্লটের কয়েক জন তাঁতমালিক জানান, কিস্তিতে প্লট বরাদ্দ নিলেও কারখানা নির্মাণের পুঁজি নেই। পল্লির আশপাশে রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় বাপ-দাদার আমল থেকে কারখানা করে ব্যবসা করে আসছি। এখন ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। সুতার দাম বেশি, শ্রমিক সংকটসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় বেনারসি তাঁতের ব্যবসায় এখন মন্দা। পাকিস্তান আমলে এখানে প্রায় ৪৫০টি বেনারসি তাঁত কারখানা ছিল। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ। ভারতীয় নিম্নমানের শাড়ি দাম কম হওয়ায় বাজার সয়লাব। লোকসানের কারণে বেনারসি তাঁতশিল্প থেকে অনেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।

পল্লিতে জামান টেক্সটাইলের দুইটি ও স্থানীয় এক তাঁত মালিকের শানজিদা শাড়ি কারখানা নামে তিনটি কারখানা চালু রয়েছে। কর্মরত কারিগররা বলেন, আমাদের তৈরি এখানকার বেনারসি-কাতান জনপ্রিয় ছিল। ১০-৩০ হাজার টাকা দামের শাড়ি এখানে তৈরি করা হয়। হাতে চালানো তাঁতে তৈরি বেনারসি-কাতান কুননে শ্রমিকদের মজুরি খরচ দিতে হয় ৩ থেকে ৮ হাজার টাকা। ভারতীয় কম দামি শাড়ি বাজারে আসায় এসব শাড়ির আর ক্রেতা পাওয়া যায় না। বেনারসিপল্লিতে সরকারিভাবে সুতা প্রসেসিং কারখানা স্থাপনের কথা থাকলেও তা হয়নি। শাড়ি প্রতি প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ করে ঢাকা মিরপুর থেকে সুতা প্রসেস করে আনতে হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের জমিতে বিভিন্ন সবজি, যেমন ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, শিম, করলা ইত্যাদির চাষ হচ্ছে। কার্যালয়ের অবস্থা বেহাল; জানালা-দরজার কাচ ভাঙা, দেয়ালের রং চটে শ্যাওলা জমে আছে, আর আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে পড়েছে। চারদিকে জঙ্গলাকীর্ণ পরিবেশ, দূর থেকে মাত্র ২-৩টি কারখানা দৃশ্যমান।

এলাকার এক নারী জানান, ‘এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা পল্লির জায়গায় সবজি চাষ করছি এবং এর জন্য মসজিদ উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বছরে কিছু টাকা দিই।’ এক কারখানার তাঁতি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘স্থায়ী কারখানা এখনো গড়ে ওঠেনি। যে কয়টি কারখানা আছে, সেগুলো আমরা নিজেদের টাকায় তৈরি করেছি। কিন্তু আর্থিক সংকটে এগুলো প্রায় সময় বন্ধ থাকে।’


কারখানার স্বত্বাধিকারী নাসিম উদ্দিন টুটুল বলেন, ৩০ বছর এ পেশায় আছি। বেনারসি তাঁতিতে এমন দুঃসময় আগে কখনো দেখিনি। ২০২০ সালের শুরুতে শাড়ি তৈরির সুতা ছিল ২ হাজার টাকা বান্ডিল (সাড়ে চার কেজি)। এখন হয়েছে ৪ হাজার টাকা। কিন্তু শাড়ির দাম বাড়েনি সাধারণ জামদানি শাড়ি তৈরিতে খরচ হয় ২৭০০ টাকা। আগে খরচ হতো ১৯০০ টাকা। সেই শাড়ি এখনো ২৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা আর চলতে পারছি না। বরাদ্দ পাওয়া প্লটে কারখানা নির্মাণ করে অতিরিক্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া তাই কারখানা স্থাপনের আগ্রহ নেই। গুচু বেনারসি বিতানের আলী আজগর গুচু বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বেনারসিপল্লির তৈরি শাড়ি দিয়ে ব্যবসা করেছি। কিন্তু ভারতীয় শাড়ি বাজারে আসার পর দেশীয় বেনারসির চাহিদা কমে গেছে। দোকানে রাখলে দেশীয় শাড়ি কেনার ক্রেতা পাই না। এসব কারণে ঐতিহ্যবাহী বেনারসি পল্লি আজ বিলুপ্তির পথে।

পল্লির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামাল বলেন, ঈশ্বরদীর বেনারসি শিল্প একসময় ব্যাপক সমৃদ্ধ ছিল। কালের পরিক্রমায় বেনারসির চাহিদা কমে যাওয়া ও ভারতীয় কম দামি শাড়ি আসার কারণে এ শিল্পটি ধ্বংসের পথে। সরকারি সহায়তার মাধ্যমে আধুনিক পাওয়ার লুমে শাড়ি তৈরি করা গেলে বেনারসি পল্লি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ