বেপরোয়া গতি
তিন চাকার অবৈধ পরিবহনে গরু বোঝাই করে নেওয়া হচ্ছে হাটে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চালকের আসনের ওপরের অংশে বসেছেন দুজন। সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীর-বানেশ্বর আঞ্চলিক সড়কে।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পাবনার ঈশ্বরদীর আঞ্চলিক মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভটভটি, নছিমন-করিমনসহ তিন চাকার বিভিন্ন যান। অথচ এসব যান মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও জেলা সড়কে চলাচলে রয়েছে সরকারের নিষেধাজ্ঞা। বেপরোয়া গতির অবৈধ এসব যানের কারণে মহাসড়কটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। গত এক বছরে ২০টি দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র বলেছে, ঈশ্বরদী উপজেলা শহরের ওপর দিয়ে নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে বানেশ্বর (রাজশাহী)-চারঘাট-বাঘা-লালপুর-ঈশ্বরদী আঞ্চলিক মহাসড়কটি। বর্তমানে ঈশ্বরদী শহর থেকে নাটোরের লালপুর, রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট ও বানেশ্বর পর্যন্ত সড়কের এসব অংশে অবাধে চলছে সহস্রাধিক নছিমন-করিমন, ভটভটি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে যাত্রী ও যান চলাচলের নিরাপত্তায় নেই গতিবেগ নির্দেশনা ও জেব্রা ক্রসিং। এতে সড়কটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া অবৈধ নছিমন-করিমনের বিকট শব্দ আর বেপরোয়া চলাচলে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে গত সোমবার পর্যন্ত এই আঞ্চলিক মহাসড়কের ঈশ্বরদী-লালপুর রুটে ২০টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার সকালে ঈশ্বরদী শহরের বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া গতির একটি নিষিদ্ধ গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান নিহত হন।
ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, সম্প্রতি এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রশস্ত হওয়ায় গাড়ির গতি দুই-তিন গুণ বেড়ে গেছে। এ সড়কে এখন দুই-এক দিন পরপরই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। একটা ভয়ংকর অবস্থা বিরাজ করছে সড়কটিতে।
আঞ্চলিক এই মহাসড়কে হরহামেশা দুর্ঘটনার জন্য স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে সড়কে শতভাগ ট্রাফিক আইন মেনে না চলা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালকের অভাব, রাস্তায় যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তায় রোড সাইন না থাকা, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল নামানো-ওঠানো রয়েছে।
ঈশ্বরদী ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম বলেন, সড়কটি অনেক প্রশস্ত হওয়ায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল করছে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে গতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চালকেরা তা মানছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, আঞ্চলিক ওই মহাসড়ক নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে সড়কটি ঠিকাদার এখনো বুঝিয়ে দেননি। এখনো বাকি আছে রোড সাইন, রোড মার্কিং, গতিরোধ চিহ্ন, জেব্রা ক্রসিং ইত্যাদির কাজ। সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।