ধানের চাতাল ও চালকল চোর চক্রের প্রধান লক্ষ্য। সুযোগ বুঝে তারা সেখান থেকে খুলে নেয় বৈদ্যুতিক মিটার। পলিথিনে মুড়িয়ে রেখে যায় মুঠোফোন নম্বর। ওই নম্বরে ফোন দিলে অপর প্রাপ্ত থেকে জানানো হয়, মিটার ফিরে পেতে চাইলে টাকা লাগবে। এরপর বিকাশে (মুঠোফোনে আর্থিক পরিষেবা) টাকা পাঠালেই মেলে মিটারের সন্ধান। আশপাশের কোনো এক জঙ্গলে মিটারটি রেখে যায় চোর চক্র।
এ রকমভাবে বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দাশুড়িয়া, বহরপুর ও রামচন্দ্রপুর অনেক চালকল অবস্থিত। চলতি মাসে এসব এলাকা থেকে অন্তত ১৫টি মিটার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে টাকা দিয়ে মিটার ফেরত পেয়েছেন নয়জন। প্রতিটি মিটার নিতে চার-পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
মিটার চুরির অভিযোগে ১৩ অক্টোবর ঈশ্বরদী থানায় মামলা করেন দাশুড়িয়া গ্রামের দীপ্ত রাইচ মিলের মালিক আবদুর রাজ্জাক। মামলায় অজ্ঞাতনামা চোর চক্রের সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি।
মামলার এজাহারে বাদী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ৪ অক্টোবর রাতের কোনো একসময় তাঁর মিলের বৈদ্যুতিক মিটারটি চুরি হয়। ৫ অক্টোবর সকালে তিনি মিলে গিয়ে মিটারটি আর দেখতে পাননি। তবে মিটারের তারের সঙ্গে পলিথিনে মোড়ানো একটি চিরকুট পান। চিরকুটে একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। নম্বরটিতে ফোন দিতেই ওপার প্রান্ত থেকে একজন নিজেকে চোর পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আপনার মিটারটি আমি চুরি করেছি। বিকাশে পাঁচ হাজার টাকা দিলে মিটারটি ফেরত পাবেন।’ তিনি চোরের কথা বিশ্বাস করে বিকাশ নম্বরে পাঁচ হাজার টাকা পাঠান। এরপর আবার ফোন দিলে চোর তাঁকে মিটারের সন্ধান দেন। গ্রামের পাশের একটি জঙ্গল থেকে তিনি মিটারটি ফিরে পান। পরে তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ থানায় মামলা করার পরামর্শ দেয়।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, মিটার চুরির পর তাঁরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেছিলেন। নতুন মিটারের জন্য বিদ্যুৎ অফিস ১২ হাজার টাকা করে দাবি করেছিল। কিন্তু চোরের কাছ থেকে তাঁরা ৫ হাজার টাকায় মিটার ফেরত পেয়েছেন।
চোর চক্রটি খুবই কৌশলী। তাদের ধরতে পুলিশের একটি দল কাজ করছে। দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে।
অরবিন্দ সরকার, ওসি, ঈশ্বরদী থানা
ছয়জন চালকলমালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক মিটার চুরির চক্রটি খুবই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত। মিল চলা অবস্থায়ও তারা মিটার চুরি করতে পারে। অনেক মিল চালু থাকা অবস্থাতেও মিটার চুরি হয়েছে। আবার কিছু মিলে সিসি ক্যামেরা ছিল। কৌশলে ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার চুরি করা হয়েছে। এই চুরির সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি তাঁরা পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে জানালেও কোনো সাড়া পাননি।
উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মিলমালিক খাইরুল বাসার বলেন, চোর চক্রকে ধরা না গেলে চুরি বাড়তেই থাকবে। দ্রুত চক্রটিকে ধরে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর উপমহাব্যবস্থাপক কামাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও বেশ উদ্বিগ্ন। চুরির এসব ঘটনা নিয়ে আমরা থানা-পুলিশ ও র্যাব অফিসে জানিয়েছি।