বৃহস্পতিবার , ৬ জুলাই ২০২৩ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. নির্বাচন

হার্ডিঞ্জ ব্রিজটা না খেলে হয় না

প্রতিবেদক
গওহার নঈম ওয়ারা :
জুলাই ৬, ২০২৩ ২:১৯ অপরাহ্ণ

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদী স্থাপনা—কেতাবি ভাষায় কেপিআই। পদ্মা নদীর ওপর প্রায় ২৪ হাজার শ্রমিকের দীর্ঘ পাঁচ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯১৫ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই সময় কিছুদিনের জন্য সেতুটি বন্ধ ছিল। তা ছাড়া ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই সেতু সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ সরকার আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে পদ্মা নদীর ওপর এ সেতু নির্মাণ করে।

মূল সেতুর কাজ শুরু করার আগে পদ্মার দুই তীরে সেতু রক্ষার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরপর সেতুটির গাইড ব্যাংক ও সেতুর গার্ডার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তখন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় ছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। তাঁর নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয়।



বর্তমানে নিয়ন্ত্রণহীন বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গাইড ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে যদি রক্ষা বাঁধটাকে ধ্বংস করা হয় আর যদি বড় বন্যা আসে, তাহলে রক্ষা বাঁধ ধসে সেতু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে



বর্তমানে নিয়ন্ত্রণহীন বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গাইড ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে যদি রক্ষা বাঁধটাকে ধ্বংস করা হয় আর যদি বড় বন্যা আসে, তাহলে রক্ষা বাঁধ ধসে সেতু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সেতুর ভাটিতে বালুমহাল স্থানান্তর খুবই জরুরি। এতে সেতু রক্ষা পাবে বলে নদীপ্রকৌশলীদের বিশ্বাস। নদী-খাল-বিল-বৃক্ষ-খাসজমি-রেলজমি এমনকি ব্রিজ-কালভার্টও নিত্য হজম করে ফেলা হচ্ছে এ দেশে। গত ১৫ মে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হয়েছে, ‘এদের (নদীখেকোদের) খুঁজে বের করতে হবে।…ধনীরা নদী দখল করে আছে, সেগুলো উদ্ধার করা কঠিন; অনেক জায়গায় তো হাত দেওয়াই মুশকিল।’

চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
ঈশ্বরদীর আলহাজের মোড় থেকে পাকশীর দিকে এগোতে থাকলে আগে যেমন লাল লোহার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ক্রমে দৃশ্যমান হতো, এখন আর তা হয় না। বালুর স্তূপ বড় হতে হতে ‘বালুর পাহাড়ের’ আড়ালে ঢাকা পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু। বড় কোনো কিছু হাপিস করার আগে তাকে লুকিয়ে ফেলতে হয় আমজনতার দৃষ্টি থেকে। সেই কাজই বুঝি চলছে বালু ব্যবসার আড়ালে।

বালুর স্তূপের কারণে বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর স্রোত বাধাগ্রস্ত ও গতিপথ পরিবর্তিত হয়। এতে সেতুর পিলার ও গাইড ব্যাংকের নিরাপত্তা আজ হুমকির সম্মুখীন। গত বছর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র সাত দিনের মধ্যে ৩ থেকে ২ নম্বর পিলার পর্যন্ত নদীর চর ভেঙে যায়। নিমেষে হারিয়ে যায় প্রায় ৩০ একর জমি। গত ৪০ বছরের মধ্যে এমন ভাঙন এখানে দেখা যায়নি।

শুরু থেকেই সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষে। সেই সুবাদে এ সেতুর আগাপাছতলা সবই তাদের এখতিয়ারে। রেলওয়ের ভূসম্পত্তি অফিস হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে নদীতীরের গাইড ব্যাংক এলাকা কৃষিকাজের জন্য লিজ দিয়ে থাকে। পতিত জমি চাষের আওতায় এলে আখেরে দেশের লাভ, মাঝখানে লোকসানের বোঝায় ধুঁকতে থাকা রেলও দুপয়সা পায়।

তবে লিজের কাগজে যা কিছু লেখা থাকুক না কেন, লিজ পাওয়ার পর জমির ভাড়াটেরাই মালিক হয়ে যায় আর তাদের রাজনৈতিক পেশি থাকলে তো কথাই নেই। বলা বাহুল্য, লিজে পাওয়া জমিতে কেউ কৃষিকাজ করে না। লিজগ্রহীতারা বা তাদের কাছ থেকে ‘সাব-লিজ’ বা ভাড়া নিয়ে সেখানে চলে বালুর ব্যবসা।

ঘাট উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পদ্মা নদীর বামনগ্রাম ঘাট সংস্কার করা এবং ঘাটের উন্নয়নে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছিল। ইট বিছানোর কাজ অনেক দূর এগোলে নদীর বুকে ইট ও বালুর স্তূপ জমা করা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হলে রেল কর্তৃপক্ষের টনক একটু নড়ে ওঠে। নানান চাপে আপাতত কাজ বন্ধ (জুন ১৭, ২০২৩) দেখা গেলেও এখনই এ প্রকল্প থেকে সরে আসছে না এলজিইডি।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার–এর প্রতিনিধিকে ঈশ্বরদীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেছেন, ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ একটি জাতীয় সম্পদ। ব্রিজটি রেল বিভাগের হলেও নদীর জায়গা সরকারের।

রেল বিভাগের আপত্তির ফলে ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রকল্পের স্থানের জায়গা ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নিয়মানুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

উচ্চ আদালত অনেক আগেই নদীকে লিগ্যাল/ জুরিসটিক পারসন (আইনগত ব্যক্তি) হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের সব নদ-নদী-খাল-জলাশয় ও সমুদ্রসৈকতের সুরক্ষা এবং তার বহুমুখী উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে।

ফলে রেল, এলজিইডি অথবা ইউএনও চাইলেই বা একমত হলেই নদীর মধ্যে কোনো স্থাপনা তৈরি করতে পারে না।

এখনই যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন
কেপিআইয়ের সার্ভে টিমের সভাপতি ও রাজশাহী রেঞ্জের অপারেশনাল অতিরিক্ত ডিআইজি নরেশ চাকমা পাবনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান (কেপিআই) হার্ডিঞ্জ ব্রিজসহ অন্যান্য স্থাপনার নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদনে বলেছেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সুনাম কেপিআইয়ের সুষ্ঠু নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। সার্ভে টিমের সুপারিশ হচ্ছে:

১. সেতুর উভয় পাশে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন, ড্রেজিং, মাছ ধরা, নৌকাভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।

২. মূল সেতুর দুই পাশে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া।

৩. হার্ডিঞ্জ ব্রিজের প্রবেশমুখে ও উভয় পাশে ঝোপজঙ্গল, দোকানপাট জরুরিভাবে অপসারণ করা।

তা ছাড়া নিরাপত্তা প্রহরীর সংকট দূর করা, দর্শনার্থী ব্যবস্থাপনার (নিবন্ধন) উন্নয়ন, নিরাপত্তা কমিটি গঠন এবং তাদের কর্মপরিধি নির্ধারণ, সিসি ক্যামেরাসহ নজরদারির জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ইত্যাদি নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।

গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক। ই–মেইল: [email protected]

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

error: Content is protected !!