প্রসব বেদনা শুরুর পরপরই পরিবারের সদস্যরা শারমিনের আকতারকে (২৭) সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আনন্দের খবরের অপেক্ষা করছিলেন শারমিন আকতার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু পথেই ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যান শারমিন। গর্ভের সন্তানটিও পেট থেকে বেরিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাটি ঘটে নীলফামারী সদর উপজেলায় নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কে সংগলশী ইউনিয়নের শিমুলতলী নামক স্থানে।
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ শাহরিয়ার মা ও নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় পেটে থাকা বাচ্চাটি বেরিয়ে যায়। মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।
সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশিদ আলম বলেন, ‘নবজাতকটিকে উদ্ধার করে উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। নবজাতকটি ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। নবজাতকটিকে যেখানে পাওয়া গেছে সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে পাওয়া গেছে মায়ের লাশ। মায়ের লাশটি ছিল ছিন্নভিন্ন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অটোরিকশাটি সড়কের ওই স্থানে এলে পেছন থেকে একটি ট্রাক সেটিকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে নিয়ে যায় প্রায় এক কিলোমিটার পথ। এ সময় অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়ে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হন শারমিন ও এ সময় ভূমিষ্ঠ হওয়া গর্ভের সন্তান।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে— শারমিনের সঙ্গে থাকা মেয়ে ইলমা মনি (৪), মা কোহিনুর বেগম (৫০), খালাতো ভাই আসাদুল ইসলাম (২৩)। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ডোমার পৌরসভার চিকনমাটি কাচারি পাড়া গ্রামের নাজিম উদ্দীনের মেয়ে শারমিন আখতার। আট বছর আগে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের মতির মোড় এলাকার হায়দার আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম লিটনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
লিটন সৈয়দপুর শহরে দরজির কাজ করেন। তাঁদের ইলমা মনি নামে ৪ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর শারমিন ডোমারে মায়ের কাছে অবস্থান করছিলেন। শনিবার রাতে প্রসব বেদনা উঠলে তাঁকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিলে সিএনজি অটোরিকশা যোগে রওনা হন।
শারমিনের বাবা নাজিম উদ্দীন বলেন, আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে শারমিন ও তাঁর নবজাতকের লাশ চিকনমাটি কাচারি পাড়ার গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। দেখে মনে হচ্ছে দুর্ঘটনাটি ট্রাকের সঙ্গে ঘটেছে।’ ওই অটোরিকশার অন্য আরোহীরা সুস্থ হওয়ার পর তাঁদের কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) নাজমুল হুদা বলেন, ‘রাত ১২টা ৫০মিনিটের দিকে বাচ্চাটাকে এখানে নিয়ে আসে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তখন বাচ্চাটির মাথায় আঘাত ছিল। শরীর ছিল রক্তাক্ত। বাচ্চাটাকে এখানে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়।’