পাবনার ঈশ্বরদীতে টানা দাবদাহে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে মুরগি। প্রাথমিক চিকিৎসা ও খামারে পানি ছিটানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও হিটস্ট্রোকে মুরগির মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।
তাপমাত্রা বেশি থাকায় ডিমের উৎপাদনও কমেছে অনেক। আকারেও ছোট হচ্ছে ডিম। দাবদাহের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং। বিগত ১৫ দিনে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করেছে।
দুই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হলেও সোমবার পর্যন্ত ঈশ্বরদীতে বৃষ্টির ছিঁটেফোটা হয়নি। এতে জনজীবন অতিষ্ঠের সঙ্গে খামারেও প্রভাব পড়েছে। গরমের তীব্রতায় খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ খামারিরা কমদামেই মুরগি বিক্রি করে খামার খালি করছেন।
প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, ঈশ্বরদীতে ৪৫১টি নিবন্ধিত পোলট্রি খামার রয়েছে। ব্রিডার সাতটি, ব্রয়লার ২১৮টি ও লেয়ার ২২৬টি। অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।
খামারিরা বলেন, দাবদাহের কারণে প্রতিদিনই মুরগি মারা যাচ্ছে। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় মুরগির মৃত্যু বেড়েছে। ওষুধ খাইয়ে ও পানি ছিটিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। ২৬০ টাকার কালার বার্ড ২০০ টাকায়, ২১০ টাকার ব্রয়লার ১৭০ টাকায় পাইকারি দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।
মুলাডুলির আহাদ পোলট্রি খামারের মালিক বলেন, খামারে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি ছিল। শতাধিক মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা গেছে। হিটস্ট্রোক থেকে মুরগিকে রক্ষা করা সম্ভব নয়, তাই কম দামে বিক্রি করে দিয়েছি। দাবদাহের কারণে আমার বিপুল টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে।
দাশুড়িয়ার বাগবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের শাহনাজ পোলট্রি খামারের সফর বিশ্বাস বলেন, খামারে সাড়ে তিন হাজার মুরগি রয়েছে। ২ হাজার ২৫০টি মুরগি ডিম দেয়। খামার থেকে প্রতিদিন ২ হাজার ১৯০ থেকে দুই হাজার ২১০টি ডিম সংগ্রহ হতো। দাবদাহের কারণে ডিম উৎপাদন কমে গেছে। এখন ১ হাজার ৮৫০টি ডিম উৎপাদন হয়। বিগত সাতদিনে ৫০টি মুরগি মারা গেছে।
পাবনা জেলা পোলট্রি খামার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন বলেন, দাবদাহের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ব্রয়লার মুরগি। ডিম উৎপাদনও কমে গেছে। দাবদাহে খামারিদের এবারে বিপুল ক্ষতি হয়েছে।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশের উষ্ণতম এলাকা হিসেবে ঈশ্বরদী পরিচিত। গত ১০ দিনে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হলেও ঈশ্বরদীতে হয়নি। তাই তাপমাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে না।
দাশুড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম কামাল হোসেন বলেন, ঈশ্বরদী ও পাবনা সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ২৯ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় সবসময় ৮-১০ মেগাওয়াট সরবরাহ কম থাকে। স্বাভাবিকভাবেই লোডশেডিং হয়। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। গত দুদিনে অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও কমে আসবে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হক হোসেন বলেন, হিটস্ট্রোক থেকে মুরগি বাঁচাতে খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খামারের ছাদ কিংবা টিনের চালায় ভেজা চট বিছানো এবং খামারে পানি ছিটালে উপকার পাওয়া যাচ্ছে।