শুক্রবার , ২৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. নির্বাচন

ঈশ্বরদী শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম : খেলার বদলে চরে গরু

প্রতিবেদক
আমাদের স্পোর্টস ডেস্ক :
আগস্ট ২৫, ২০২৩ ১১:৪৬ অপরাহ্ণ

পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার দক্ষিণ পাশে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। শহরের প্রাণকেন্দ্র ও মূল ফটকজুড়েই অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এই স্টেডিয়াম। একসময় এখানে সকাল-বিকাল ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার অনুশীলন হতো।

তবে নানা অব্যবস্থাপনা, অযত্ন-অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এর অস্তিত্ব। প্যাভিলিয়ন গ্যালারি ও ওয়াশরুম ব্যবহারের অনুপযোগী। মাঠে চরানো হয় গরু-ছাগল। আশপাশে ফেলা ময়লার স্তূপ দেখে মনে হয় যেন ভাগাড়। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে নির্মাণসামগ্রী রাখাসহ অন্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে স্টেডিয়ামটি।

এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পাইলিংয়ের কোটি টাকার মাটি ফেলায় স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাস মরে নরম ভূমি পাথরে পরিণত হয়ে গেছে। পানি সুবিধার জন্য বসানো সাবমার্সেবলও চুরি হয়ে গেছে। স্টেডিয়াম দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি জনপ্রিয় স্টেডিয়াম। এর জৌলুশ ফিরিয়ে এনে খেলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন খেলোয়াড়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে ঈশ্বরদী পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল মনসুর খান ৬ দশমিক ৫৪ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বরদী পৌর স্টেডিয়াম। ১৯৭৮ সালে স্টেডিয়াম মাঠের আয়তন বৃদ্ধি করে চারপাশে সীমানাপ্রাচীর তুলে মাঠ সম্প্রসারণ করা হয়। তারপর থেকেই জেলা-উপজেলার ক্রিকেট ও ফুটবল একাডেমির বড় বড় টুনার্মেন্ট এ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৯৪ সালে চেয়ারম্যান আবুল মনসুর খানের মৃত্যুর পর পৌরসভার উদ্যোগে তার নামেই আবুল মনসুর খান পৌর স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়।

সর্বশেষ ২০১৫ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নিজ অর্থায়নে একটি প্যাভিলিয়ন (ড্রেসিং রুম) তৈরি করে দিলেও ডিজাইনে ত্রুটি ও অযত্ন-অবহেলায় তা বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী। পরবর্তীতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত দেশের ১৮৬টি উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তারই ধারাবাহিকতায় ঈশ্বরদী আবুল মনসুর খান পৌর স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ২০১৯ সালে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়। এই স্টেডিয়ামে খেলা অনুশীলন করে বিভাগীয় পর্যায়ে ১২ জন ও ঢাকা লীগে ২ জন খেলোয়াড় জায়গা করে নিয়েছেন। গত চার বছর মাঠে সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে পশ্চিম পাশের প্যাভিলিয়ন গ্যালারি, পাশেই নির্মিত ওয়াশরুমের দেয়াল ফেটে খসে পড়ছে পলেস্তারা ও বের হয়ে আছে মরিচাযুক্ত রড। ময়লা-আবর্জনা আর আগাছায় ছেয়ে আছে স্টেডিয়ামের চারপাশ। সীমানাপ্রাচীরের বেশকিছু অংশ ভেঙে পড়ায় সেখানে অবাধে যাতায়াত করছে মাদকসেবীরা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পাইলিংয়ের মাটি ফেলায় সবুজ ঘাস মরে মাটি পাথর হয়েছে। স্থানীয়রা গরু-ছাগল এনে মাঠের অভ্যন্তরেই বেঁধে রেখেছে। স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে সামান্য জায়গা পাকা করে জাল দিয়ে ঘিরে ক্রিকেট অনুশীলন করতে দেখা গেছে কয়েকজন খেলোয়াড়কে।

স্টেডিয়ামে অনুশীলনরত অবস্থায় কথা হয় তরুণ আলী হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, বাড়ির আশপাশে স্টেডিয়াম ছাড়া খেলাধুলার কোনো মাঠ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এই স্টেডিয়াম মাঠেই খেলে আসছি। একটা সময় ক্রিকেট আর ফুটবলের গড়ানিতে স্টেডিয়ামটি প্রাণচাঞ্চল্য ছিল। এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। নির্মিত প্যাভিলিয়ন ও ওয়াশরুম এখন ময়লার ভাগাড় এবং আগাছায় ছেয়ে গেছে। শেখ রাসেলের নামে এ স্টেডিয়ামটির ভগ্নদশা দেখে খুব আফসোস লাগে। আমাদের মতো অনেক তরুণের খেলোয়াড় অনুশীলন করতে না পারায় খেলার প্রতি অনীহা চলে আসছে।

উপজেলার মশুরিয়াপাড়া এলাকার তরুণ ফুটবলার ইমরান হোসেন বলেন, ঈশ্বরদী একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। আর পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী এ স্টেডিয়ামের ভগ্নদশা দেখে যেন মনে হয় দেখার কেউ নেই। এত সংকটের পরও মাঝেমধ্যে খেলা অনুশীলন করি। কিন্তু মাটি শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে অনুশীলনের সময় অনেক অসুবিধার মুখে পড়তে হয়। এ ছাড়া ক্লান্ত হয়ে পড়লে পানি খাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। শৌচাগার ও বিশ্রামাগার থাকলেও তা জঙ্গলে পরিণত। স্টেডিয়ামটি দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।

ঈশ্বরদী ক্রিকেট একাডেমির কোচ মারুফ হোসেন বলেন, ১০ বছর ধরে এই স্টেডিয়ামে খেলাধুলা করেছি এবং নিজেই একটা ক্রিকেট একাডেমি তৈরি করেছি। একাডেমিতে ২৫-৩০ জন খেলোয়াড় রয়েছে। অনেক খেলোয়াড় এই স্টেডিয়ামে অনুশীলন করে বিকেএসপিতে চান্স পেয়েছে। কিন্তু তিন-চার বছর ধরে এই স্টেডিয়ামে কোনো খেলাধুলা হয় না। রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের পাইলিংয়ের বিষাক্ত মাটি ফেলায় স্টেডিয়ামের ভূপৃষ্ঠ পাথরে পরিণত হয়েছে। খেলতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হতে হয়। তবুও খেলোয়াড়দের অনুশীলন করানো বাদ রাখিনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ বলেন, এ স্টেডিয়াম নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলেছি। ঈশ্বরদীতে একটি আধুনিক স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগস্টের পর জাতীয় ক্রীড়া অ্যাসোসিয়েশন থেকে একটি দল আসবে স্টেডিয়াম পরিদর্শন করতে। পরিদর্শন শেষে তাদের সঙ্গে কথা বলে একটি আধুনিক স্টেডিয়াম চালু করা হবে।

পৌরসভার মেয়র ইসাহক আলী মালিথা বলেন, স্টেডিয়ামে মাটি ফেলে আপাতত খেলার পরিবেশ করে দেওয়া হবে। আমরা স্টেডিয়ামটিকে আধুনিক করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এলজিইডির অর্থায়নে (আরইউটিডিপি) প্রকল্পের আওতায় একটি আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিগগির স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ শুরু হবে।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

error: Content is protected !!