পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মানিক নগর পূর্ব পাড়া ফারুক হোসেনের লিচুর বাগানে পরিবেশ বান্ধব নিরাপদ লিচু চাষে ব্যাগিং প্রযুক্তির উপর মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ রবিবার (১৬ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণে মূল প্রশিক্ষক ছিলেন লিচু চাষে ব্যাগিং প্রযুক্তির গবেষক ড. শরফ উদ্দিন, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ফল বিভাগ, উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, এছাড়াও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার, ওসাকা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এসইপি-র হর্টিকালচার-(ফলচাষ-লিচু) উপ-প্রকল্পের টেকনিক্যাল অফিসার কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান।
প্রশিক্ষণে উপ-প্রকল্পের ১৫ জন মডেল উদ্যোক্তা লিচু চাষী ছাড়াও আগ্রহী আরও ৫ জন স্থানীয় চাষী অংশগ্রহণ করেন।
উপ-প্রকল্পের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মোঃ শাহিনুর রহমান শাহিন জানান গত বছর ২০২২ মৌসুমে তার বাগানের ব্যাগিং করা লিচু পিকেএসএফ ও বিশ্বব্যাংক এর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রয় করে লাভবান হন।
অংশগ্রহণকারী আগ্রহী চাষীদের মধ্যে কাজল সরদার জানান যে, ২০২২ সালে এলাকায় প্রথমবারের মত লিচুতে ব্যাগিং প্রযুক্তির সফলতা দেখে তিনি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন এবং তার বাগানে ব্যাগিং প্রযুক্তি যুক্ত করবেন।
জয়নগরের দেলোয়ার হোসাইন বলেন, প্রকল্পের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে জানতে পেরে তিনি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে আগ্রহী হন এবং এবছর প্রথমবারের মত লিচুতে ব্যাগিং প্রযুক্তিতে লিচু চাষ করবেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, সরকার কৃষিতে মাত্রারিক্ত সার ও যেনতেনভাবে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার থেকে কৃষকদের নিবৃত্ত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এনজিও-দের পরিবেশবান্ধব নিরাপদ কৃষি উৎপাদনে প্রকল্পগুলো নিঃসন্দেহে দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রশংসার দাবী রাখে। এসইপি-র হর্টিকালচার-(ফলচাষ-লিচু) উপ-প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ নিয়মিত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে পরিবেশবান্ধব নিরাপদ লিচু চাষে স্থানীয় কৃষকদের সহায়তা প্রদান করছেন।
ড. শরীফ উদ্দিন বলেন, ব্যাগিং প্রযুক্তিটি সফলভাবে আম, কলা ও লিচুতে ব্যবহৃত হচ্ছে। লিচু ফলটি অত্যন্ত পছন্দনীয় ও জনপ্রিয় ফল। এ ফলটিতে রোগ বালাই ও পোকার আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম হয়। তারপরও লিচুর বোটার নীচে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। এই পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লিচু চাষীরা বেশ কয়েকবার বালাই নাশক ব্যবহার করে থাকেন। শুধু তাই নয় লিচু সংগ্রহের ২/৩ দিন আগেও ক্ষতিকর বালাই নাশক ব্যবহার করেন। ফলে এ সমস্ত লিচুতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি থাকতে পারে যা স্বাস্থ্য ঝুকির কারণও হতে পারে। বর্তমানে উৎপাদিত লিচু রপ্তানি করা যায় না। কিন্তু লিচু উৎপাদনে ব্যাগিং প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করা হলে, কোন প্রকার বালাইনাশকের ব্যবহার ছাড়াই নিরাপদ, বিষমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য লিচু উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত লিচুর বাজার মূল্য বেশী হবে এবং চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
উপ-প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুল হক জানান যে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পিকেএসএফ এর সহযোগিতায় স্থানীয় এনজিও ওসাকা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “পাবনা জেলায় পরিবেশ সম্মত উপায়ে নিরাপদ লিচু চাষ উৎপাদন প্রবর্তন” শীর্ষক উপ-প্রকল্পের আওতায় দেশে প্রথমবারের মত কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষে ব্যাগিং প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়। এই প্রযুক্তির সুবিধা হলো- সবচেয়ে ক্ষতিকর ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ শতভাগ কমানো যায়, কোন প্রকার কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয় না, ঢেকে থাকার কারণে পাখী, কাঠবিড়ালী ও বাদুড় স্পর্শ করতে পারে না, কোন রাসায়নিক পর্দাথ (সার, ভিটামিন, কীটনাশক) সরাসরি ফলের গায়ে লাগে না, ফলে নিরাপদ লিচু উৎপাদন সম্ভব, লিচুর থোকায় সবগুলি লিচুই সমান ও বড় সাইজের হয়, ব্যাগিং করা লিচু স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও ১০-১২ দিন বেশি গাছে রাখা যায়, ফলে লিচুর মৌসুম পক্ষকাল দীর্ঘায়িত হয়। এছাড়াও ব্যাগিং প্রযুক্তি নিরাপদ, বিষমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য লিচু উৎপাদনের সফল উপায়। এই প্রযুক্তির সফলতা স্থানীয় কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
ফলে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে এসইপি-র (ফলচাষ-লিচু) উপ-প্রকল্পের অধীনে হাতে-কলমে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়।