একদিকে মুকুল কম, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া। রাতে ঠান্ডা ভাব, দিনে দাবদাহ। আর এ কারণে ঝরে যাচ্ছে গুটি। ফলে চলতি মৌসুমে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় লিচুর ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাগান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লিচুচাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি লিচুর উৎপাদন হয় ঈশ্বরদীতে। তাই উপজেলাটির এখন ‘লিচুর রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত। চলতি মৌসুমে উপজেলাটিতে ৪ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। আবাদি এই জমি থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৭৪৬ মেট্রিক টন। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
প্রাকৃতিকভাবেই চলতি মৌসুমে লিচুর মুকুল বেরিয়েছে ৬৫ শতাংশ। বাকিটায় নতুন পাতা বের হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে লিচুর জন্য প্রতিকূল আবহাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এবার লিচুর ফলন কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে।
সরেজমিন গত সপ্তাহে ঈশ্বরদীতে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে শুরু করে গ্রামের পর গ্রাম শুধু লিচুর আবাদ। সলিমপুর, সাহারপুর, লক্ষ্মীকুণ্ডা, দাশুড়িয়া, সাড়া, জয়নগর, মানিকনগর ও মিরকামারি গ্রামে দেখা যায়, সবুজ লিচুগাছ এখন হলুদরঙা মুকুলে ছেয়ে আছে। কিছু গাছে মুকুল থেকে বেরিয়েছে গুটি। বাগানে ঢুকলেই চোখে পড়ছে গুটি ঝরার দৃশ্য। চাষিরা গুটি ঝরা রোধে নানা চেষ্টা করছেন। কেউ ওষুধ ছিটাচ্ছেন, কেউ স্প্রের যন্ত্র দিয়ে পানি দিচ্ছিলেন।
লিচুচাষিরা বলেন, ঈশ্বরদীতে চায়না-৩, বোম্বাই, মোজাফ্ফর ও দেশি জাতের লিচুর চাষ হয়। সারা দেশেই এখানকার লিচুর চাহিদা আছে। ফলে প্রতিবছর মৌসুম শুরুর আগেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগানের লিচু কিনে নেন। এর পর থেকে লিচু তোলা ও বাজারজাতের দায়িত্বটা তাঁরাই করেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন কম। তাঁদের হিসাবে গত বছরের তুলনায় অর্ধেক মুকুল এসেছে। অন্যদিকে, বর্তমানে লিচুর জন্য বিরূপ আবহাওয়া রয়েছে। রাতে শীত ও কুয়াশা ভাব থাকছে। দিনে হচ্ছে দাবদাহ। অন্যদিকে, অনেক দিন ধরে বৃষ্টিও হচ্ছে না। এ কারণে প্রতিদিন প্রচুর লিচু গুটি ঝরে যাচ্ছে। তাই পাইকারেরা লোকসানের ভয়ে বাগান কিনছেন না। এতে চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের লিচুচাষি সামান্য মালিকা জানান, তাঁর ৪ বিঘা জমিতে ৭০টি লিচুগাছ আছে। গত বছর গুটি বের হওয়ার পরই বাগান বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু চলতি বছর পাইকার পাচ্ছেন না। গুটি ঝরায় পাইকাররা বাগান কিনছেন না।
অপর বাগানমালিক শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘ইবার ফুলই আইচে অর্ধেক, ইয়ের পর গুটি ঝরতিছে। সামনি আবার ঝড়-বাদল আছে। আমাগের তো মাথায় হাত পরছেই। দেশের মানুষ লিচু খাতি পারবিনি কি না আল্লাহ জানেন।’
পাইকারি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ৩২টি গাছের একটি বাগান কিনেছিলেন। বাগানের পুরো লিচু ঝরে যাচ্ছে। তাই নতুন করে আর বাগান কিনছেন না। যেটা কিনেছেন, সেটার পুরোটাই লোকসান হবে বলে মনে করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই এক বছর লিচুর ফলন ভালো হলে পরের বছর ফলন কিছুটা কম হয়। গাছ দেহ গঠনের জন্য ফুল দেয় না। চলতি মৌসুমেও এমনটি হয়েছে। ফুলই এসেছে ৬৫ শতাংশ। তবে গুটি ঝরা রোধে তাঁরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। বৃষ্টি হলে গুটি ঝরা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।