এবারের ঈদযাত্রায় ৫ থেকে ১৬ জুলাই ১২ দিনে সড়কে এক হাজার নয়শ ৫৬টি দুর্ঘটনায় তিনশ ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন এক হাজার ছয়শ ১২ জন। সেইসঙ্গে প্রায় সোয়া কোটি মানুষের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি তো ছিলই।
রবিবার (১৭ জুলাই) সেভ দ্য রোডের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সেভ দ্য রোড তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ মানুষের মধ্যে ৯৬ লাখ মানুষ সড়ক, রেল ও নৌপথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে দুই থেকে চারগুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করেছেন এবার। বাকি ২৯ লাখ মানুষ নিজস্ব বাহন বা অন্য কোনো আরামদায়ক বাহনে যাতায়াত করলেও রেলের ছাদে চড়ে গন্তব্যে গেছেন অর্ধলাখ মানুষ। এরপরও রেল কর্তৃপক্ষের লাঠির আঘাত সহ্য করতে হয়েছে, দিনের অধিকাংশ সময় ট্রেনের বগিতে বন্দিদশার মতো করে পার করতে হয়েছে।
তারা জানায়, মোটরসাইকেলের ‘মুভমেন্ট পাস’ নামক উদ্ভট সিদ্ধান্তও ছিল এবার। মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির পথে যেতে না পারায় অনেককে অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, ভাড়ায়চালিত প্রাইভেটকার এমনকি কোরবানির পশু বহনকারী পিকআপ, ট্রাকের পাল্লায়ও পড়তে হয়েছে। এসব বাহনে নির্মমভাবে কোরবানির পশুর মতো গাদাগাদি করেও বাড়িতে যেতে হয়েছে কয়েক লাখ মানুষকে।
এই সময়ে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি নিয়ম না মানা এবং হেলমেট ব্যবহারে অনীহার কারণে চারশ ১৮টি দুর্ঘটনায় ৫৫ জন নিহত এবং তিনশ ৬৮ আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই বাইক লেন না থাকার কারণে প্রাইভেটকার, ট্রাক, বাস-মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বাহনের পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার কারণে ঘটেছে। কোনোরকম বিরতি না নিয়ে টানা ট্রাক চালানোর কারণে অসাবধানতা ও ঘুমন্ত চোখে ক্লান্তি থাকায় প্রসূতি মায়ের মতো ৮৮ জন নিহত হয়েছেন পাঁচশ দুইটি দুর্ঘটনায়, আহত হয়েছেন একশ ৭৪ জন।
চরমভাবে অচল রাস্তাঘাট আর সড়কপথে নৈরাজ্যের কারণে পাঁচশ ১১টি বাস দুর্ঘটনায় একশ দুই নিহত এবং ছয়শ ৩৬ জন আহত হয়েছেন। পাড়া-মহল্লা-মহাসড়কে অসাবধানতার সঙ্গে চলাচলের কারণে লড়ি, পিকআপ, নসিমন, করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, বাইসাইকেল ও সিএনজি দুর্ঘটনা ঘটেছে পাঁচশ ২৫টি। এতে ৭৯ জন নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন চারশ ৩৪ জন।
এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনা দেশবাসীকে বেশি নাড়া দিয়েছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় স্বামী, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তাদের শিশু সন্তান নিহত হলেও বেঁচে আছে দুর্ঘটনার সময় জন্ম নেওয়া নবজাতক।
এ ছাড়া ৫ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৬টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৭ জন, আহত হয়েছেন একশ ২৭ জন। প্রায় অর্ধলাখ মানুষ রেলপথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে চলাচলে যেমন ভোগান্তি সহ্য করেছেন, তেমনি ছাদ থেকে পড়ে এবং রেল ক্রসিংয়ে একশ ২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১ জন নিহত ও দুইশ ১২ জন আহত হয়েছেন। আকাশপথে দুর্ঘটনা ঘটলেও যাত্রী না থাকায় কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে একটি দুর্ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে আহত হয়েছেন তিনজন। এ ছাড়া বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে ২৭ জনকে।
সেভ দ্য রোড’র মহাসচিব শান্তা ফারজানা জানান, ২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ২১টি টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি সেভ দ্য রোড’র চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, সেভ দ্য রোড’র প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সক্রিয় সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের তথ্যে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সেভ দ্য রোড’র গবেষণা সেলের তথ্যে স্বপ্নের পদ্মাসেতুতে গত ১২দিনে ২১টি দুর্ঘটনার কথা উঠে এসেছে। এতে আহত হয়েছেন ২৭ জন। দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি তা রোধে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সেভ দ্য রোড। এ ছাড়া ২০০৭ সাল থেকে দুর্ঘটনামুক্ত পথের জন্য তারা সাতটি দাবি জানিয়ে আসছে।