মাত্র ৬ ফুট লম্বা বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছিল পাকিস্তানি আমলে। ৭৫ বছর আগে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ কালভার্টের ওপর দিয়ে চলাচল করে কলকাতাসহ ঢাকা ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ১৪ জোড়া যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন। ব্রিজ দিয়ে ট্রেন অতিক্রম করার সময় যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো কেঁপে উঠলে ট্রেনের যাত্রীরা কিছুটা আতঙ্কিত হত।
৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা ব্যয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতাধীন ‘ঈশ্বরদী-খুলনা’র মধ্যবর্তী ফুলতলা-দৌলতপুর স্টেশনের কাছে বক্স কালভার্ট সংস্কার কাজ শুরু করেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রকৌশলী বিভাগ।
সোমবার (৬ জুন) দুপুর দেড়টায় পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ঈশ্বরদী-খুলনা রেলরুটের দৌলতপুর-ফুলতলা রেলস্টেশনের মাঝে ১৮৩ নাম্বার বক্স কালভার্টের অস্থায়ী ব্যবস্থাপনার রেললাইন তৈরি করা হয়।
তার আগে দুপুর দেড়টায় ১৮৩ নাম্বার কালভার্টে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ, ফাটল ধরা, আরসিসি স্লাভকে অন্যত্র সরিয়ে অস্থায়ীভাবে রেললাইন তৈরি করা হয়।
পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষ, অস্থায়ী লাইন তৈরি করতে ২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল। বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। কিন্তু আধা ঘণ্টায় রেললাইন সচল করা হয়। পরে বিকেল থেকে ট্রেন যাওয়া আসা শুরু করে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জোনের আওতায় অধিকাংশই ব্রিজ-কালভার্ট নির্মিত হয় সেই বৃটিশ ও পাকিস্তানি শাসনামলে। ব্রিজগুলো সত্তর থেকে একশ-দেড়শ বছর ছুঁই ছুঁই। স্বাভাবিক কারণে এসব ব্রিজে আগের মত ধারণক্ষমতা নেই বললেই চলে।
খুলনা-ঈশ্বরদী এই রেলরুটে সপ্তাহের একদিন বাদে প্রতিদিন ১৪ জোড়া আন্তঃনগর মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর পরও আধুনিকতার ছোঁয়া তো দূরের কথা, সংস্কারই হয়নি এ পর্যন্ত।
এসময় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খানের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন-পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী-১ বীরবল মণ্ডল, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (যশোহর) কাজী ওয়ালীউল হক, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) চাঁদ আহম্মেদ, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ব্রিজ) হাসান আলী, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) মাহাবুব হাসান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার চান্না মোল্লা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ব্রিজ) হাসান আলী জানান, পাকশী বিভাগের আওতায় ১৮৩ নাম্বার জরাজীর্ণ ব্রিজ দিয়ে ১৪ জোড়া ট্রেন এবং মালবাহী ট্রেন চলাচল করতো। কালভার্টে টবস্লাভগুলো পাকিস্তানি আমলের। তাই ধারণক্ষমতা আগের মত আর নেই। ব্রিজ দিয়ে ট্রেন অতিক্রম করার সময় কেঁপে উঠতো।
তিনি আরও জানান, কালভার্টের সামনে এসে ট্রেনগুলো সম্পূর্ণ থেমে যেত। রেললাইনের দুই পাশে ওয়েম্যান ট্রেনের ইঞ্জিনে থাকা চালকের কাছ থেকে ওটিপিতে স্বাক্ষরের পর আবার ধীর গতিতে ট্রেনগুলো পারপার হতো।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী (ডিএন১) বীরবল মণ্ডল জানান, ঈশ্বরদী-খুলনা রেলরুটে বৃটিশ ও পাকিস্তানি আমলের নির্মিত ৩৬৪টি ছোট-বড় রেলওয়ে ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। তার মধ্যে দৌলতপুর-ফুলতলার মধ্যে ১৮৩ নাম্বার কালভার্ট স্লাভ ব্রিজটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ৬ ফুট লম্বা বক্স কালভার্টটি ১৯৪৮ সালে নির্মাণ করা হয়েছি পাকিস্তানি আমলে।
ডিএন-১ বীরবল মণ্ডল আরও জানান, ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকায় পাকিস্তানি আমলে তৈরি পুরোনো বক্স কালভার্টের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ডেডস্টপ হওয়ায় ট্রেনগুলো এসে শূন্য কিলোমিটার গতিতে এসে সম্পূর্ণ থেমে যায়। সংস্কার কাজ শেষ হলে আগের মত ৮০ কিলোমিটার গতিতে আবার ট্রেন চলাচল করবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান জানান, ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তানি আমলে নির্মিত ব্রিজে আগের মত ধারণক্ষমতা নেই। এসব রেলব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচল করলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পশ্চিমাঞ্চল প্রকৌশলী বিভাগ আধুনিক মজবুত করে রেল ব্রিজগুলোর সংস্কার কাজগুলো শুরু করেছে।
অতিরিক্ত প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান আরও বলেন, রেলওয়েতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দৃশ্যমান উন্নয়নের কাজগুলো চলমান রয়েছে।ঝুঁকিপূর্ণ রেল ব্রিজগুলো পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন শুরু করছি। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো আগে সংস্কার করা হচ্ছে।
জানা যায়, ১৯১২ সালে পাকশী পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মিত হওয়ার পর ঈশ্বরদী-খুলনা রেলরুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল। দেশ ভাগের আগে ১৯৪৭ সালের দিকে এই রুটে অধিকাংশ ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়।