সারাদেশে ৮৮২ হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ
তীব্র যন্ত্রণা শুরুর পর এক প্রসূতিকে নেওয়া হয়েছিল অস্ত্রোপচার কক্ষে। চলছিল অস্ত্রোপচার শুরুর যাবতীয় কার্যক্রম। এর মধ্যেই খবর আসে- হাসপাতালে অভিযানে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দল। এর পর প্রসূতিকে ওটিতে রেখেই হাসপাতালে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান মালিকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মী। পরে অভিযান পরিচালনাকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিদেশে ভাঙা হয় হাসপাতালের ফটক। ওই নারীকে উদ্ধার করে দ্রুত নেওয়া হয় মাতুয়াইলে শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন রোগীকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চলমান অভিযানে রোববার এমন ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলের পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে গত বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের অভিযানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৮৮২টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। জরিমানা করা হয়েছে কয়েকশ প্রতিষ্ঠানকে। নিবন্ধন না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. বেলাল হোসেন জানান, গত বুধবার অধিদপ্তরে এক সভায় অনিবন্ধিত ও নবায়নবিহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এর পর বৃহস্পতিবারই অভিযান শুরু হয়। মাঝে শুক্রবার বন্ধ ছিল। রোববার পর্যন্ত তিন দিনের এ অভিযানে ঢাকা বিভাগে ১৬৭, চট্টগ্রামে ২২৯, রাজশাহীতে ৭৮, রংপুরে ১৪, ময়মনসিংহে ৯৬, বরিশালে ৫৯, সিলেটে ৩৫ ও খুলনায় ২০৪টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে অভিযান বিষয়ে রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রশাসন) সভাপতিত্বে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পরিচালক (প্রশাসন) ও পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া দেশের আট বিভাগের পরিচালক ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। সভায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখতে দেশের সব বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে অভিযান না চালাতে অনুরোধও করা হয়। এ ছাড়া অনিবন্ধিত হাসপাতালের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ না করে ধীরে ধীরে নিবন্ধনের আওতায় আনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, অভিযানের সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সংবাদ সম্মেলন করে জানাবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলন শেষ করে তিনি এরই মধ্যে দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সব ঠিক থাকলে আগামীকাল সোমবার তিনি দেশে থাকবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা জানিয়েছে, রোববার তিনটি দল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি হাসপাতাল সিলগালা করেছে। এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দুটি দল অভিযান চালিয়ে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ জানান, অবৈধ বা নিবন্ধনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এ অভিযান অত্যন্ত সময়োপযোগী। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এর দরকার ছিল। এ ধরনের অভিযান অব্যাহতভাবে পরিচালিত হলে যেমন খুশি তেমনভাবে হাসপাতাল পরিচালনা বন্ধ হয়ে যাবে। বেসরকারি পর্যায়ে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা থেকে জানা গেছে, দেশে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৯৩টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত রয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার ২৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তিন হাজার ৭০৫টি হাসপাতাল ও ১৬২টি ব্লাডব্যাংক। তবে নিবন্ধনের বাইরে কত প্রতিষ্ঠান আছে তার কোনো হিসাব তাদের কাছে নেই। এরই মধ্যে ৮৮২টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। অভিযান চললে এ সংখ্যা কয়েক হাজারে উন্নীত হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) বলেন, বেসরকারি খাতে ১০ সহস্রাধিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থাকলেও এ শাখায় লোকবল অপ্রতুল। মাত্র দু’জন উপপরিচালক, চারজন সহকারী পরিচালক ও দু’জন মেডিকেল কর্মকর্তা দিয়ে এই বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনার আগ্রহ জানিয়েছিল। আবার জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এসব পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনেকটা হঠাৎ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।