পদ্মা নদীর ঈশ্বরদীর সাঁড়া অঞ্চলে আবারও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকার জিও ব্যাগও রক্ষা করতে পারছে না পদ্মা নদীর ভাঙনরোধ। এতে আরও ১০ বিঘা জমি বিলীন হয়েছে। ফলে কৃষকদের কোটি টাকার ফসল নদীগর্ভে চলে গেছে।
অসময়ে এমন ভাঙন শুরু হওয়ায় নদীপাড়ের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধও পড়েছে হুমকির মুখে।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পদ্মনদীর সাঁড়াঘাটের থানাপাড়ার পয়েন্টে সরেজমিন পরিদর্শন করে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে ব্যাপক ভাঙন শুরু হলে নদীর ভাঙন প্রতিরোধে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়। ২৫০ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ ফেলানো হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুবোঝাই এসব জিও ব্যাগ সাঁড়ার বিভিন্ন স্পটে ডাম্পিং করা হয়। পরে আরও ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, দুই দফায় সেখানে ৮টি প্যাকেজের পাউবোর জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। প্রথমে ৫টি প্যাকেজে এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩টি প্যাকেজে ডাম্পিং করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আর সংখ্যাও অনেক কম ছিল। ফলে এসব জিও ব্যাগ ভাঙনরোধে খুব একটা কাজে আসছে না। এর আগে একই স্থানে ব্যাপক ভাঙনে শত শত বিঘা জমি বিলীন হওয়ায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কাজের মান নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা। কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও দায়সারাভাবে প্রকল্পের কাজ হয়েছে। মাঝেমধ্যে ভাঙন হবে আর কিছু জিও ব্যাগ ফেলানো হবে এটা আমরা চাই না। স্থায়ীভাবে নদী রক্ষার করনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তারা।
স্থানীয় ইকবাল হোসেন নামের একজন বলেন, মাঝেমধ্যেই এখানে ভাঙন দেখা দেয়। যার জন্য এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ঘর ওঠাতে পারি না। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। সরকারের কাছে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান দাবি করেন তিনি।
আম্বিয়া খাতুন নামে একজন গৃহবধূ বলেন, নদী পাড়ে ৩০ থেকে ৪০ বছর বসবাস করছি। এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। সন্তানাদি নিয়ে বড় কষ্টে দিনাতিপাত করি। অন্যত্র জমি কিনে বাড়ি করার সামর্থ্য নেই। তাই সন্তানাদি নিয়ে রাত-দিন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি। সরকার যদি আমাদের অন্য কোথায় কোনো বসবাসের উপযোগী জায়গা করে দিত তাহলে ভালো হতো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, আমরা নদীভাঙনের বিষয়টি শুনেছি। শিগগির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জিও ব্যাগ ফেলানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস নতুন করে ভাঙনের জন্য নদী রক্ষা বাঁধকেই দুষলেন। জিও ব্যাগের ডাম্পিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিও ব্যাগের কোনো অনিয়ম হয়নি। সেখান থেকে ভাঙনও শুরু হয়নি। হয়তো আশপাশ থেকে শুরু হয়েছে। নদী রক্ষায় যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেখানে অনিয়ম হয়েছে। আমার ধারণা, সেই বাঁধের কিছু জায়গা ভেঙে পড়ায় সেখান দিয়ে পানি প্রবেশ করে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।’
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।