টানটান উত্তেজনার ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। দুবাইয়ে শুরুতে ব্যাট করে রিজওয়ানের পর ফখরের ঝড়ে ১৭৬ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় পাকিস্তান। জবাবে ৫ উইকেট হারিয়ে ৬ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ক্যাঙ্গারুরা। রোববার অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ প্রথম সেমিফাইনালে জয় পাওয়া নিউজিল্যান্ড।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই অ্যারন ফিঞ্চকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। শাহিন আফ্রিদির তৃতীয় বলে এলবিডব্লিউ হন অজি দলপতি। ১ বল খেলে খাতা খুলতে পারেননি তিনি। শুরুতে উইকেট পড়লেও দলকে চাপে পড়তে দেননি আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। দ্বিতীয় উইকেটে মিচেল মার্শকে নিয়ে ৫১ রানের জুটি গড়েন তিনি। দলীয় ৫২ রানে বিপজ্জনক মিচেল মার্শকে আউট করেন শাদাব। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আসিফ আলীর ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে ২২ বলে ২৮ রান করেন তিনি। পরের ওভারে স্টিভ স্মিথকে ফিরিয়ে দেন শাদাব খান। স্মিথ ৫ রান করে ফখরের হাতে ধরা পড়েন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে সাবধানী থাকলেও সময়ের সাথে বড় শট খেলেন দুই ওপেনার। এমন সময় ম্যাচের তৃতীয় ওভারে রিজওয়ানের ক্যাচ ফেলে দেন ডেভিড ওয়ার্নার। ম্যাক্সওয়েলের বলে উড়িয়ে মারা বল অনেকটা দৌড়ে ক্যাচ ধরার চেষ্টা করেন ওয়ার্নার। কিন্তু বল তার হাতে লেগে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে চলে যায়। উইকেট হারানোর বদলে চার রান উপহার পায় পাকিস্তান।
ম্যাচের ষষ্ট ওভারে ফের ক্যাচ মিস করে অস্ট্রেলিয়া। এবার কামিন্সের বলে রিজওয়ানের ক্যাচ ছাড়েন জাম্পা। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৪৭ রান তুলে পাকিস্তান। পাওয়ারপ্লে’তে এর আগে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রান তুলেছিল পাকিস্তান। দলীয় ৭১ রানে অ্যাডাম জাম্পার বলে ডেভিড ওয়ার্নারের তালুবন্দী হন পাকিস্তানের অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে করেন ৩৯ রান।
১৪তম ওভারের পঞ্চম বলে রিজওয়ানের ছক্কায় ১০০ ছাড়ায় পাকিস্তানের স্কোর। পরের বলে ১ রান নিয়ে রিজওয়ান পৌঁছে যান ফিফটিতে। ৪১ বলে ফিফটি পান ডানহাতি ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি তার ২৭তম ফিফটি। এবারের বিশ্বকাপে তৃতীয়।
সতেরোতম ওভারে বল করতে আসেন হ্যাজেলউড। ফখর জামান ও রিজওয়ান দুটি ছক্কা মারেন। রিজওয়ানডের ব্যাট থেকে আসে একটি চার। এছাড়া দুই সিঙ্গেল, এক ডাবল ও নো বলে মোট ২১ রান পায় পাকিস্তান।
দলীয় ১৪৩ রানে মিচেল স্টার্কের বলে স্টিভ স্মিথের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন রিজওয়ান। ৩ চার ও ৪ ছক্কার সাহায্যে ৫২ বলে ৬৭ রান করে ক্রিজ ছাড়েন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ফখর জামানকে নিয়ে ৭২ রানের জুটি গড়েন ওপেনার রিজওয়ান। তার ফেরার পরপরই সাজঘরে ফেরেন আসিফ আলী। কোনো রান না করেই স্টার্কের বলে স্টিভ স্মিথের তালুবন্দী হন তিনি।
দলীয় ১৬১ রানে ফখর জামানের সহজ ক্যাচ ছাড়েন স্টিভ স্মিথ। স্কোরকার্ডে ১ রান যোগ হতেই শোয়েব মালিককে ফেরান মিচেল স্টার্ক ২ বলে ১ রান করে বোল্ড হন তিনি। এরপর ৩ চার ও ৪ ছক্কার সাহায্যে ৩১ বলে ব্যক্তিগত হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ফখর জামান। স্টার্কের বলে পরপর ২টি ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতরানের গণ্ডি টপকে যান তিনি। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ ১৭৬ রান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুই উইকেট শিকার করেন স্টার্ক। একটি করে উইকেট পান কামিন্স ও জাম্পা।
গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনালের আগে পাকিস্তান দল দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল দুই নির্ভরযোগ্য তারকা রিজওয়ান ও মালিকের অসুস্থতার খবরে। তবে স্বস্তির খবর, দুই তারকাই ফিট হয়ে উঠেছেন। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পূর্ণশক্তির দল নিয়েই শেষ চারের লড়াইয়ে নামে পাকিস্তান।
পাকিস্তান একাদশ:
বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), ফখর জামান, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, আসিফ আলি, শাদাব খান, ইমাদ ওয়াসিম, হাসান আলী, হারিস রউফ, শাহিন শাহ আফ্রিদি।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ:
ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), মিচেল মার্শ, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড (উইকেটরক্ষক), প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা, জশ হ্যাজলউড।
সতীর্থরা যখন যাওয়া আসার মিছিলে সামিল হয়েছে, তখন দলকে টেনে তুলছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু দলীয় ৮৯ রানে শাদাব খানের বলে রিজওয়ানের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। নিশ্চিত হাফ-সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন তিনি। ৩ চার ও ৩ ছক্কার সাহায্যে ৩০ বলে ৪৯ রান করেন তিনি। এরপর ব্যক্তিগত ৭ রানে ফেরেন ম্যাক্সওয়েলও। প্রথম পাঁচ উইকেটের মধ্যে চারটিই নেন পাকিস্তানি স্পিনার শাদাব খান।
১২ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২২ রান। কাজটা নিমিষেই করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাথু ওয়েড ১৯তম ওভারে শাহীন শাহ আফ্রিদিকে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচটা নিজেদের করে নেয়। পরপর তিন ছক্কা হাঁকানোর আগে ম্যাথু ওয়েডকে জীবন দিয়েছিলেন হাসান আলী। ক্যাচ মিসে ম্যাচটাই মিস করে ফেলল পাকিস্তান।