রবিবার , ২৮ নভেম্বর ২০২১ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

ঈশ্বরদীর রূপপুর-এখানেই কাজ, এখানেই সুখ

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
নভেম্বর ২৮, ২০২১ ৫:৫০ অপরাহ্ণ
ঈশ্বরদীর রূপপুর-এখানেই কাজ, এখানেই সুখ

জাহীদ রেজা নূর : ‘মারেন, মারেন, আমারে মারেন।’—পেছন থেকে কে যেন বলে ওঠে। কেন একজন অচেনা মানুষকে মারতে যাব, সেটা বোধগম্য হয় না। ঘুরে ভদ্রলোকের দিকে তাকাই। খুবই মায়াবী চেহারার মানুষটি তাঁর কথার পুনরাবৃত্তি করেন।


ভোরের সূর্য উঠতেই রূপপুরের পথে পথে শুরু হয়ে যায় শ্রমিকদের ব্যস্ততা। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে যখন একদল শ্রমিক সে দিকে রওনা হয়েছেন, তখন আরেক দল কাজ শেষে বাড়ির পথে। আর এতেই সচ্ছলতা ফিরেছে ওই শ্রমিকদের পরিবারে।


তখন সবে ভোর। সূর্য কেবল পুবাকাশে তার অবস্থান পোক্ত করে নিচ্ছে। পাকার মোড় থেকে ইপিজেডের দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটা যেখানে ঢালু হয়ে বাঁয়ে ঘুরেছে পাকশী বাজারে যাবে বলে, সেখানেই লোকটা আমার মার খেতে চাইছেন।

তাঁর দিকে তাকানোর পর যখন দেখলাম হাতের ক্যামেরাটার দিকে তাঁর দৃষ্টি, তখন বুঝতে আর অসুবিধা হলো না, এর মানে ‘শার্টারে টিপ মারা’র কথা বলছেন।
-আমার নামটা আবদুল করিম।
-আপনি কি কাজে যাচ্ছেন?
-হ্যাঁ, আমি তো পারমাণিকে কাজ করি?
কোথায়?
-ওই যে পাকার মোড়ে।

বোঝা গেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরি করেন আবদুল করিম। চলেছেন কাজে। ফুরফুরে মেজাজ।

-কত দিন ধরে ‘পারমাণিকে’ কাজ করেন?
-দুই মাস। আগে অন্য কোম্পানিতে ছিলাম ছয় মাস।
-বেতন কেমন পান?
-বিশ হাজার।
-তাতে সংসার কেমন চলে?
-খুব ভালো স্যার।

একটা মোটরসাইকেল সাঁ করে বেরিয়ে যায় পাশ দিয়ে। তাতে আবদুল করিমের হঠাৎ মনে হয় এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করতে থাকলে ‘পারমাণিকে’ সময়মতো পৌঁছানো কঠিন হবে। তাই বিদায় নিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে বড় রাস্তায় ওঠেন। এখান দিয়ে ইজিবাইক যায়। ৫ টাকা নেয় পাকার মোড় পর্যন্ত যেতে।
পাকশী বাজারের কাছে দেখা হয়ে যায় মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে। তিনিও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের পোশাকে চলেছেন। দুই বছর ধরে কাজ করছেন প্রকল্পে।

-আগে আপনি কী করতেন?
-আগে আমি ট্রাকের বডি মিস্ত্রির কাজ করতাম। তারপর এখানে যে বন্ধুরা কাজ করত, তারা জানাল ওরা এখানে কাজকাম করছে, ভালো স্যালারি পাচ্ছে। আমারও লকডাউনে কাজকাম কমে গেল। এখানে চলে আসলাম। ওয়েল্ডারের কাজ করি। আগেই কাজটা শেখা ছিল।

সে পথেই এগিয়ে আসছিলেন মোহাম্মদ আল আমীন। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল আরেক কাহিনি। মোহাম্মদ আল আমীন ১৫ মাস ধরে কাজ করছেন প্রকল্পে। এর আগে তিনি ব্রুনাইতে কাজ করতেন। করোনার জন্য তিনি আর বিমানে চড়তে পারেননি। ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেল। এরপর এখানে থিতু হলেন।
-আয় কি এক রকম?
-না। ব্রুনাইতে বেশি ছিল। কিন্তু এখানে সুখ বেশি। দ্যাশে মানুষ সবাই একসাথে থাকি, বাবা-ভাই-বোন…
-বউ নাই?
-আছে। বউ-বাচ্চা আছে।
-বেতন কত পান জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেবেন? এটা অবশ্য খুব খারাপ প্রশ্ন। উত্তর না দিলে দিয়েন না।
-দিমু না ক্যান? সতেরো পাই। ওভারটাইম করলে বিশ-বাইশ। তারপরও সুখে আছি।

প্রকল্পে কাজ করা স্থানীয় শ্রমিকেরা নিজেদের বাড়িতে থাকেন বলে তাঁদের খরচ কম। এ কারণেই বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকার মধ্যে যাঁদের আয়, তাঁরাও সংসারটা বেশ গুছিয়ে নিতে পেরেছেন।

সকালে প্রকল্পে ঢোকার জন্য যাঁরা ইজিবাইক, মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রওনা হয়েছেন, তাঁদের সবার মুখেই খুশির আমেজ। কোনো রুক্ষ, বিমর্ষ বা গোমড়া মুখ দেখিনি। ইজিবাইকে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা গল্প করতে করতে যাচ্ছেন। একটি টানেল আছে, যা দিয়ে একদিকের গাড়ি চললে আরেক দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এখানে এসে একটা স্নায়ুযুদ্ধের শুরু হয়। পাকার মোড় থেকে বাহন আসতে থাকে ইপিজেডের দিকে, ইপিজেডের দিক থেকে পাকার মোড়ের বাহন আসে বিপরীত দিক থেকে। ফলে টানেলের সামনে একদিকের গাড়ি চলতে শুরু করলে অন্যদিকের বাহন আটকে থাকে অনেকক্ষণ। সে সময় নার্ভাস হয়ে কোনো কোনো শ্রমিক নেমে পড়েন ইজিবাইক বা সিএনজি থেকে, হেঁটেই পাড়ি দেন বাকি পথটুকু। মোটরসাইকেলগুলো অবশ্য জায়গা করে নিয়ে দিব্যি বিপরীতমুখী গাড়িকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পার হয়ে যায় টানেলটা।

আমরা যখন প্রকল্পের কাছাকাছি, তখন দেখা যায় এক বিরাট জনস্রোত সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে চলেছে। সবাই কাজে ঢুকে পড়বেন। রাস্তার অন্যদিকে বড় এক মাঠে একটার পর একটা মোটরসাইকেল রাখা হচ্ছে। আর এখানে দাঁড়িয়েও অর্থনীতির ঘুরন্ত চাকার নিশানা পাওয়া যায়।

প্রথমত, এ এলাকায় সাইকেল দেখা যেত প্রচুর। এখন শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো হওয়ায় অনেকেই মোটরসাইকেল কিনেছেন। এখানে এসে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খুঁজে পেয়েছেন আয়ের পথ। সস্তা পাউরুটি, কলা, চা ইত্যাদি নিয়ে হাজির হয়েছেন কেউ। প্রকল্পে ঢোকার আগে শ্রমিকেরা কিনে খাচ্ছেন। কেউ কেউ এখান থেকেই প্যাকেটে করে দুপুরের খাবার নিয়ে যাচ্ছেন। একজন মাস্ক বিক্রি করছেন। ঝালমুড়িওয়ালাও হাজির।

এই মোটরসাইকেলের ভিড়ে কেউ আসে কেউ যায়। অনেকে যেমন ঢুকছেন প্রকল্পে, তেমনি অনেকে কাজ শেষ করে বের হয়ে যাচ্ছেন। তাঁদেরই একজন মো. রিপন ইসলাম, স্টার্ট দিচ্ছিলেন তাঁর মোটরসাইকেলে।
-কাজ শেষ?
-হ্যাঁ, কাল রাত আটটা থেকে কাজ করছি।
-বাড়ি গিয়ে কী করবেন?
-মনে করেন বাড়ি গিয়ে অজু করে বা গোসল করে ঘুমালাম। তারপর পড়াশোনা, পরীক্ষে আছে আমার।
-কাজের পাশাপাশি পড়াশোনাও করছেন? কী নিয়ে পড়ছেন?
-আমি অ্যাগ্রিকালচারে ডিপ্লোমা করি। সপ্তম সেমিস্টার। পড়ি ঈশ্বরদী অ্যাগ্রিকালচারে।
-চাকরি আর পড়াশোনা একসঙ্গে করতে কষ্ট হয় না?
-কষ্ট তো হয়ই। কিছু পাতি হলি একটু তো স্যাক্রিফাইস করাই লাগে।
-মোটরসাইকেল কবে কিনলেন?
-এই তো কিছুদিন আগে। থাকি ভেড়ামারা। এখন মোটরসাইকেলে এখানে আসা সহজ।

লালন সেতু পার হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় তিনি চলে যাবেন খুব দ্রুত।

দুই শিফটে কাজ হয় এখানে। যাঁরা প্রকল্পে ঢুকবেন তাঁরা তাড়াহুড়ো করছেন। যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সেই তাড়া নেই। তেমনই একজন দীর্ঘকায় শহীদুল ইসলাম নিজের পরিচয় দিলেন ‘ওয়ার্কার’ বলে। পাশে থাকা আরিফ সরকারেরও একই পরিচয়। তাঁরা দুজনেই জানালেন, এখানে কাজ করতে ভালো লাগে। রাশানদের সঙ্গে কথা হয় খুব কম, তবে ওরাও একটু একটু বাংলা শিখে গেছে। শহীদুল ইসলাম জানালেন, আগের জীবনের চেয়ে এই জীবনটা ভালো লাগে। আয়-রোজগার বেড়েছে।

এ সময় ভিড়টায় একটা চাঞ্চল্য দেখা যায়। সম্ভবত প্রকল্পে ঢোকার শেষ সময় চলে এসেছে। ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো ফাঁকা হতে থাকে।

আরও পড়ুন-

ঈশ্বরদীর রূপপুর : বাংলার হাটে রুশ হাটুরে

উনিশতলা ভবনগুলো যেন মর্যাদারই প্রতীক

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

আপনার জন্য নির্বাচিত

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ