ঈশ্বরদীর পদ্মায় অসময়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ছয় দিনে উপজেলার নদীর সাঁড়া ইউনিয়নের অংশে প্রায় ৭০০ বিঘা জমি ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত নদীর বাম তীর সংরক্ষণ বাঁধ। ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তী মানুষেরা।
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে স্থানীয় সাংসদ নুরুজ্জামান বিশ্বাস, ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েক আলী বিশ্বাস, পৌর মেয়র ইছাহক আলী মালিথা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েসসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাঁড়ার পুরাতন থানাপাড়া, ব্লকপাড়া ও ইসলামপাড়া এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের কোল ঘেঁষে কিছু এলাকা ও দূরে চরের বিস্তীর্ণ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পাঁচ নম্বর ঘাট থেকে বেশ কিছু দূরে চরের জমি পানির তোড়ে ভেঙে যাচ্ছে।
এ সময় এলাকার কৃষকেরা বলেন, পদ্মায় অসময়ে ভাঙনের ফলে মাঝিদের ৩টি নৌকা ভাঙনের সময় ডুবে যায়। এ ছাড়া চরের ৭০০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। সাঁড়ার এলাকাটি এক সময় ঈশ্বরদীর মূল শহর ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে নদীভাঙনে এখানকার হাজারো বিঘা জমি-ঘর-বাড়ি ও স্থাপনা নদীতে ভেঙে গেছে। পরিবর্তে সাঁড়ায় ২০০ কোটি টাকার অধিক খরচে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যার কাজ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালে। বাঁধ নির্মাণের ফলে তাঁরা চিন্তামুক্ত হন। কিন্তু চার বছর পর আবার সাঁড়ায় নদীভাঙন শুরু হওয়ায় তাঁরা আতঙ্কিত হন।
হঠাৎ নদীভাঙনের ভয়ে আতঙ্কিত ইসলামপাড়ার গৃহবধূ আমেনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘এত্তদিন তো ভালোই ছিনু। চিন্তা ছিলি না। এখুন আবার গাঙ ভাঙতে লাগলি। গাঙ ভাঙুনের আগে সেই কথা মনে হলি ঘুম আসে না। এখুন যে আবার কি হবেনি বাবা?’
সাঁড়ার আড়ামবাড়িয়ার গ্রামের জিল্লুর রহমান জীবন বলেন, হঠাৎ নদীর তীব্র ভাঙনে তাঁদের চোখের সামনে নৌকা ও কয়েক শ বিঘা জমি পদ্মা গ্রাস করে নেয়। পানির তোড় দেখে মনে হয়েছে তাঁর যে ভাঙন আরও তীব্র হতে পারে। ভাঙন সম্পর্কে তাঁর ধারণা, বাঁধ নির্মাণের সময় সঠিক নিয়মে বালুর বস্তা ডাম্পিং না করায় বর্তমানে চরের জমি ভাঙনের কারণে নদীর তীর হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
ইউপি চেয়ারম্যান রানার সরদার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষ্য অনুযায়ী এখনো বাঁধ ক্ষতির মধ্যে পড়েনি। তবে হঠাৎ কেন পদ্মায় ভাঙন শুরু হলো তা পর্যবেক্ষণের জন্য নদীতে ডুবুরি নামিয়ে দিয়ে গভীরতা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে পদ্মায় ভাঙনের খবরে স্থানীয় সাংসদ নুরুজ্জামান বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি পরিদর্শন দল গত মঙ্গলবার সাঁড়া এলাকা পরিদর্শন করে। এ সময় সাংসদ নুরুজ্জামান বিশ্বাস দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, তাঁরা ভাঙনের বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ব্যবস্থা নিতে জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন-