পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারলেও রেলে পণ্য পরিবহনে আগ্রহ বাড়ছে আমদানিকারকদের। যে কারণে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন থেকে গত দুই অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ। এর মধ্যে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন থেকে এসেছে ২৪৭ কোটি টাকা।
রেলের পশ্চিম জোনের তথ্য অনুযায়ী, রেলের পশ্চিম জোনের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পথে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম জোনের অধীনে মোট 8টি আন্তর্জাতিক সীমান্ত পথ রয়েছে। কিন্তু রেলের পশ্চিম জোনের ৫টি সীমান্ত পথ দিয়েই বিদেশি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে। পশ্চিম জোনের এমন সাফল্যের পর বন্ধ আন্তর্জাতিক সব সীমান্ত পথ দ্রুত সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা না হলেও ঝামেলা ছাড়াই ট্রেনে পণ্য পরিবহন ও অপেক্ষাকৃত কম খরচের জন্য আমদানিকারকদের রেলে পণ্য আমদানির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। রেলে আমদানি পণ্য পরিবহনে প্রতি টনে খরচ হয় মাত্র ৩৬৭ টাকা। রেলের পাকশি বিভাগের দর্শনা, বেনাপোল, রহনপুর ও চিলাহাটি এবং লালমনিরহাট বিভাগের বিরল স্টেশন দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে।
আমদানিকারকরা বলেন, শুধু সীমান্ত পথ উন্মুক্ত করলেই হবে না। এর সঙ্গে সঙ্গে রেলস্টেশনগুলো আধুনিকায়ন, আমদানি পণ্য পরিবহন ও পণ্য খালাসের জন্য পর্যাপ্ত ইয়ার্ড তৈরি, ওজন স্কেল স্থাপনসহ আমদানির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন থেকে দুই অর্থবছরে রেকর্ড রাজস্ব আয় করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ।
পশ্চিম জোনের ১৭টি স্টেশনে আমদানি করা পণ্য খালাস করা হচ্ছে। তবে অধিকাংশ স্টেশনেই নেই আমদানি পণ্য খালাসের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। পশ্চিম জোনের অন্যতম বড় স্টেশন ঈশ্বরদী। এখানে আমদানি পণ্য খালাসের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় দিনের পর দিন আমদানিকারকদের অপেক্ষা করতে হয়।
ব্যবসায়ীরা বলেন, স্টেশন এলাকায় রেলের পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও এসব জায়গা বেদখল হয়ে আছে। অথচ পার্কিংয়ের জায়গার অভাবে ভোগান্তিতে রয়েছেন আমদানিকারকরা। পণ্য খালাসের জন্য রেলওয়ের ইয়ার্ড সম্প্রসারণসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। সেই সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করা গেলে বিদেশি পণ্য পরিবহন আরও বাড়বে।
কৃষিপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আর আর ফিডের প্রতিনিধি মানিক হোসেন বলেন,২-৩টি ট্রাকে এই স্টেশন থেকে পণ্য খালাস করা যায়। স্টেশনে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় পণ্যবাহী ট্রেন খালাস করতে দীর্ঘদিন সময় লেগে যায়। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে আমার প্রতিষ্ঠান ৫২টি ভারতীয় ওয়াগনে ৫০০ টনের বেশি খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয়। ৩-৪ দিনের মধ্যে আমদানি করা পণ্যগুলো খালাসের সক্ষমতা থাকলেও স্টেশনে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা না থাকায় সময় লেগে যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ দিন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, আমদানিকারকদের স্বার্থে রেল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে যেসব স্টেশনে পণ্য খালাস হয় সেগুলোর আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া যমুনা নদীতে চলমান রেল সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলে পণ্যবাহী ট্রেন সরাসরি পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য এলাকায় পরিচালনা করা হবে।