**নেই গবেষণা ও সংরক্ষণাগার ** গত বছরের তুলনায় ৮৫ কোটি টাকা কম বিক্রি **
লিচুর রাজধানী হিসেবে ঈশ্বরদীর সুখ্যাতি বিশ্বব্যাপী। লিচুর রাজধানী ঈশ্বরদী বা লিচুনির্ভর অনেক পরিবার থাকলেও লিচুর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে। অদক্ষ লিচু চাষি, ভেজাল কীটনাশক ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন লিচু চাষিরা। তাছাড়া লিচু সংরক্ষণাগার না থাকায় অল্প সময়ে কম দামে লিচু বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।
লিচু সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হলে এই সুমিষ্ট ফলটি একদিকে বেশি দিন পাওয়া যেত অন্যদিকে সঠিক দামে বিক্রি করতে পারতেন চাষিরা। লিচুর ঐতিহ্য ধরে রাখতে লিচু আসার আগে থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত গবেষণা ও লিচু চাষিদের সঙ্গে কৃষি বিভাগের সমন্বয় ও গবেষণা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া দরকার কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের। তবেই অটুট থাকবে লিচুর রাজধানীর ঐতিহ্যে।
রাসালো এই ফলের প্রচার বাড়াতে ও ঈশ্বরদীতে লিচু গবেষণাগার, ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণাগারের দাবিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২ দিনব্যাপী লিচুমেলা। এই মেলা কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয় ঈশ্বরদী।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠজুড়ে করা হয় ৩০টি স্টল। যেখানে ছিল টসটসে লিচুসহ রকমারি ফল আর সবজি। বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির আয়োজনে ২ ও ৩ জুন অনুষ্ঠিত মেলার সভাপতিত্ব করেন পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নুরুজ্জামান বিশ্বাস। এছাড়া মেলায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয়ভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে আগত স্বনামধন্য কৃষকরা।
স্বর্ণপদক খেতাব পাওয়া চাষি ঈশ্বরদীর আবদুল জলিল কিতাব মণ্ডল ওরফে ‘লিচু কিতাব’ বলেন, প্রতিবছর উৎপাদনের ৩০ শতাংশ লিচু নষ্ট হয় গাছতলায়। অপচয় হওয়া এই লিচু সংরক্ষণ করে কাজে লাগানোরও উপায় আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, লিচুতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল।
গাছ থেকে ঝরে পড়া লিচু প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে অ্যালকোহলিক পণ্য তৈরি করা সম্ভব। এতে লিচু থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সুযোগ আছে। শুধু সংরক্ষণাগার না থাকায় বাংলাদেশে লিচু উৎপাদন, বিপণন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রচুর সম্ভাবনা থাকার পরও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
পদকপ্রাপ্ত কিষানি নুরুন্নাহার বলেন, দেশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, ডাল গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। অথচ সম্ভাবনাময় লিচুর জন্য নেই সংরক্ষণাগার, গবেষণাগার। আমরা চাই নতুন আরো লিচুর জাত উদ্ভাবন হোক। এতে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশও সমৃদ্ধির পথে হাঁটবে।
কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি ময়েজ উদ্দীন জানান, ঈশ্বরদীর ঐতিহ্য লিচু। এর সঙ্গে জড়িত অনেক লিচু চাষি, লিচু কন্যা ও বেকার শিক্ষার্থীরা। লিচু মৌসুমে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ জোগায় অনেকেই। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদীতে ২০২২ সালে ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৮০০ হেক্টর জমি লিচু চাষের আওতায় এসেছে। প্রতি বছর এখানে ২০-২৫ হাজার টন লিচু উৎপাদন হয়। গত বছর ঈশ্বরদীতে লিচু বিক্রি হয়েছিল ৪৩০ কোটি টাকার। এ বছর জমির পরিমাণ বাড়লেও লিচু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা কমে নির্ধারিত হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছরের ক্ষতির পরিমাণ হবে অনুমানিক ৮৫ কোটি টাকা। ঈশ্বরদীতে লিচু মেলাটি হওয়া প্রয়োজন ছিল। সেই সঙ্গে লিচু গবেষণাগারটি প্রয়োজন। এই মেলার মাধ্যমে লিচু চাষিদের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটবে বলে আশা রাখি।
পাবনা-৪ আসনের এমপি নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ঈশ্বরদীতে একটি কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। দেশের এক-দশমাংশ সবজি উৎপাদন হয় ঈশ্বরদীতে। এখানকার লিচুর রয়েছে আলাদা সুনাম। প্রতিবছর এখানে ৫০০ কোটি টাকার লিচু কেনাবেচা হয়। ফলে ঈশ্বরদীতে কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার ও লিচু প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে।