বাড়িতে চিঠি লিখে রেখে হারিয়ে যায় মেয়েটি। সেই চিঠি হাতে নিয়ে দেড় বছর ধরে মেয়ের খোঁজে পথে পথে ঘুরছেন বাবা। থানায় মামলা করেছিলেন। পুলিশ আসামি ধরে আদালতে সোপর্দ করেছিল। সেই আসামি জামিনও পেয়েছেন। এখন মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। কিন্তু দেড় বছর পার হলেও মেয়ের খোঁজ তিনি পাননি।
তাঁর বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার দিয়াড় বাঘইল গ্রামে। রেলওয়ের কর্মচারী ছিলেন তিনি। গত বছর মে মাসে অবসরে যান ইসমাইল হোসেন। এখন বাড়িতেই থাকেন এবং মেয়ের সন্ধান করে বেড়ান।
ইসমাইল হোসেনের মেয়ের নাম শশি খাতুন। ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে বান্ধবীর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি সে। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। চুল কালো ও মাঝারি।
ঘটনার দিন রাতেই বাবা ইসমাইল হোসেন ঈশ্বরদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে এ ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। শশি খাতুন ঈশ্বরদী মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
মা–বাবাকে ‘প্রিয়’ সম্বোধন করে লেখা চিঠিতে শশি খাতুন লিখেছে, ‘আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আর বাঁচতে চাই না। আমি তোমাদের একটি মিথ্যা কথা বলেছি, তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর যদি ক্ষমা না কর, তাহলে আমি মরেও শান্তি পাব না।’
হারিয়ে যাওয়া শশি খাতুন
ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শশি একটা ছেলেকে ভালোবাসত। একপর্যায়ে পরিবারকে বলেছিল, সে ছেলেটাকে ভুলে গেছে। এই কথাটাকে ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করে চিঠিতে শশি জানিয়েছে, আসলে সে ওই ছেলেকে ভালোবাসে। ছেলেটি তার ভালোবাসা বুঝতে পারেনি বলে সে পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছে। মৃত্যুর পরও সে ওই ছেলেকে ভালোবাসবে। অন্য কাউকে বিয়ে করে সে তার জীবন নষ্ট করতে চায় না।
চিঠির বাকি অংশজুড়ে রয়েছে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিদায়, ক্ষমা চাওয়া ও সবার জন্য শুভকামনা জানানোর বর্ণনা। আদরের ছোট ভাগনি তুলির উদ্দেশে শশি লিখেছে, ‘তুলি জানকেও বলছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর তুমি ভালো থেকো।’ ছোট বোনের ছেলে ও মেয়েকে লিখেছে, ‘শাওন-মণিও ভালো থাকিস। আর শাফিনকে তোমরা ভালো রেখো।’ শেষ দুটি বাক্যে লিখেছে, ‘তোমরা প্লিজ আমাকে সবাই ক্ষমা করে দিও। আর আমার জন্য দোয়া করো, আমি যেন মরেও শান্তি পাই। ইতি তোমাদের আদরের শশি।’
ইসমাইল হোসেন বলেন, সব সময় মেয়ের চিঠি, ছবি ও মামলার কাগজ সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন। যদি কোথাও কোনোভাবে মেয়েকে পেয়ে যান। মেয়ের লাশটা পেলেও বুঝতে পারতেন যে তাঁর মেয়ে মারা গেছে। মনকে বুঝ দিতে পারতেন।
কিছুতেই মনকে বোঝাতে পারছেন না জানিয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, কেউ মেয়েকে নিয়ে গিয়ে কোনো যৌনপল্লিতেও বিক্রি করে দিতে পারে, এই ভেবে সম্ভাব্য সেসব স্থানেও খোঁজ নিয়েছেন।
যে ছেলেটির সঙ্গে শশির সম্পর্ক ছিল ঈশ্বরদী থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। ছেলেটি পুলিশের কাছে বলেছেন, শশি কোথায় আছে, তিনি তা জানেন না। ছেলেটি এখন জামিনে আছেন।
বর্তমানে মামলার তদন্ত করছে পাবনার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জানতে চাইলে পিবিআই পাবনার পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী মঙ্গলবার বলেন, ওই ছেলে ও মেয়ের মুঠোফোনের তথ্য যাচাই করে তাঁরা কোনো সূত্র খুঁজে পাননি। সন্দেহজনক কয়েকটি জায়গায় মেয়েটির মা–বাবাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটির সন্ধান মেলেনি।