ঈশ্বরদীতে জন্মাষ্টমীতে দেশের বানভাসিদের জন্য করা হলো প্রার্থনা; আর উৎসবের খরচ কমিয়ে সেই অর্থ দুর্গতদের কাছে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি এলো।
২৬ আগষ্ট সোমবার সকাল থেকে বারোয়ারী ঠাকুরবাড়ী শ্রী শ্রী সত্য নারায়ণ বিগ্রহ মন্দির, দাশুড়িয়া বারোয়ারী দেবক্রিয়া মন্দির, আরামবাড়ীয়া বারোয়ারী মন্দির, পাকশী সার্বজনীন পূজা মন্দির, মুলাডুলী ঘোষপাড়া সার্বজনীন মন্দির, মুলাডুলী পালপাড়া দূর্গা মন্দির ও ফরিদপুর শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরসহ উপজেলার প্রায় সকল মন্দিরে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞের মাধ্যমে জন্মাষ্টমীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
৯টার দিকে পূজা উদযাপন পরিষদের উপজেলা কমিটির সভাপতি সুনিল চক্রবর্তি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল রায়,বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক গোপাল অধিকারী ও পূজা উদযাপন পরিষদের পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক তাপস সাহা,হিন্দু মহাজোট পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন সাহাসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নেতারা গুরুবরণ করেন।
পরে সুনিল চক্রবর্তি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রতি বছরের মতো এবারও জন্মাষ্টমী উদযাপন করা হবে। এরই মধ্যে আকস্মিকভাবে বন্যায় দেশের একটি বিরাট অংশ প্লাবিত হয়ে গেল, জনগণের একটি বিরাট অংশ অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে পড়ল। আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম, পূজার বাইরেও এমন কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে, যেগুলো না করলেও চলে। যেমন অতিরিক্ত আলোকসজ্জা, শোভাযাত্রায় আমরা অনেক কিছু বাদ দিতে পারি, ধর্মীয় আঙ্গিকটা রেখে আমরা করতে পারি। সেই দিক থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই অংশটা আমরা বন্যার্তদের জন্য পাঠিয়ে দেব।’
তাপস সাহা বলেন, ‘সবাইকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি, তারাও যেন এভাবে জন্মাষ্টমীর খরচ বাঁচিয়ে বন্যার্তদের জন্য অর্থ পাঠিয়ে দেন। এটা নতুন নয়, জাতীয় যেকোনো দুর্যোগে আমরা এ কাজটা করেছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ৮৮ এর বন্যা, ৯৮ এর বন্যায় পূজার খরচ বাঁচিয়ে বন্যার্তদের সহযোগিতা করেছিলো। সব সময় আমরা জাতীয় দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকি।’
ক্ষমতার পালাবদলের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনায় যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠার আশা করেন গোপাল অধিকারী। তিনি বলেন, ‘জন্মাষ্টমীর মাধ্যমে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হোক। ক্ষমতার পালাবদলে কারণে আমাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, এটা কেটে যাক, শান্তি ফিরে আসুক। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেন দেশ গড়তে পারি।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সনাতন ধর্মের অবতার হিসেবে প্রেম, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারী ও দুর্জনের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় ভালো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন।
উপজেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, দুষ্টের দমন করতে একইভাবে যুগে যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে আসেন। এসে সত্য ও সুন্দর ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন। পাপমোচন ও পূণ্যলাভের আশায় জন্মষ্টমীতে উপবাস পালন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।