ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী পদ্মা নদীর তীরে নির্মাণাধীন রূপুপর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ানদের মধ্যে এ যাবত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে সাহাপুরে বিদেদিদের আবাসন প্রকল্প গ্রিন সিটির বহুতল ভবনের একটি কক্ষ থেকে আলেকজান্ডার (৪৫) নামে এক রুশ নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি প্রকল্পের ‘নিকিম অ্যাটোমস্ট্রয়’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। এ নিয়ে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচজন রুশ নাগরিকের মৃত্যু হলো।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকাজ শুরু হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পে চার হাজার ৮০০ জনের মতো বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। তাদের ৪০-৪৫ ভাগ রাশিয়ান নাগরিক। অন্যরা বেলারুশ, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের নাগরিক। প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা প্রকল্প এলাকার কাছে গ্রিন সিটি আবাসনে বসবাস করেন। সুরক্ষিত এই আবাসনে বাজার, বারসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
বিদেশিদের বসবাসের জন্য সাহাপুরের নতুনহাটে গ্রিন সিটি আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে। গত দুই বছরে ২১টি সুদৃশ্য ভবনে বিদেশিরা বসবাস করছেন। এর পর থেকেই শুরু হয়েছে মৃত্যুর ঘটনা। রহস্যজনকভাবে গত দুই বছরে এখানে ১৬ রাশিয়ানের মৃত্যু হয়েছে।
কী কারণে এদের মৃত্যু হচ্ছে, সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কখনও বলছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, আবার কখনও বলছেন অতিরিক্ত মদপানে মারা গেছেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি এ ব্যাপারে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ইনচার্জ ও সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা কেবিএম রুহুল কুদ্দুসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১০ দিনে মৃত পাঁচজনের মধ্যে একজন কর্মরত অবস্থায় মাথায় আঘাত পেয়ে মারা গেছেন। বাকিরা হৃদরোগে অথবা অতিরিক্ত মদপানে আক্রান্ত হতে পারেন।
এভাবে রাশিয়ান নাগরিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে প্রকল্পের নির্মাণ সংস্থা রাশিয়ার রোসাটম কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ট্রিউন গ্রুপের একজন কর্মকর্তাকে একাধিকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মৃত্যুবরণকারি রাশিয়ানদের মধ্যে প্রকৌশলীসহ অন্যান্য পদে কর্মরত ছিলেন। এদের বয়স ৩০-৫০ এর মধ্যে। একটি সুত্রে জানা গেছে, এদের অধিকাংশই বিবাহিত এবং পরিবারের সদস্যরা রাশিয়াতে অবস্থান করেন। জীবিকার তাগিদে চাকরি করতে বাংলাদেশে এসে এভাবে মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যদের কষ্টে পড়তে হচ্ছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. আসমা খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাশিয়ানদের লাশ তাদের দেশে পাঠানোর জন্য যেসব কাগজপত্র দরকার হয় তা আমরা দিই। তবে তাদের কারো চিকিৎসা করার সুযোগ আমরা পায়নি। কারণ মারা যাওয়ার পর তাদের এখানে আনা হয়। তাদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেখার সুযোগ আমাদের নেই। ফলে কীভাবে মারা গেছে তা আমরা সঠিক বলতে পারব না।
কয়েক দিনে বিদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর কারণ খুঁজতে কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঈশ্বরদী থানার ওসি আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, অল্প সময়ে কয়েকজনের মৃত্যু হওয়ায় তাদের মৃত্যুর কারণ খুঁজে দেখা হচ্ছে। এই প্রকল্পে বিদেশি নাগরিক যারাই মারা যান, তাদের প্রত্যেকের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। এই পাঁচজনেরও হয়েছে। তাদের শরীর থেকে নেওয়া নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষাও হবে। ইতোমধ্যে দুজনের নমুনা রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে।
বিদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি। রুটিন কাজের অংশ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
( প্রতিবেদনটি লিখেছেন ঈশ্বরদী সিনিয়র সাংবাদিক আলাউদ্দিন আহমেদ)।