রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে ফ্রি পাওয়া প্রায় কোটি টাকার মাটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঈশ্বরদী পৌরসভার। পৌর স্টেডিয়ামের ৬ দশমিক ৫৪ একর জায়গার পুরোটা জুড়ে দুই ফুট উঁচু করে ফেলা এই মাটি পাথরে পরিণত হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে এখানে সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। এই মাটির ওপরে নতুন করে এক ফুট মাটি ফেললে তবেই আবার এখানে জন্ম নেবে ঘাস, স্টেডিয়ামের মাঠে গড়াবে ফুটবল বা ক্রিকেটের বল। এ জন্য পৌরসভার ব্যয় হবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
রূপপুর প্রকল্প থেকে বিনামূল্যে পাওয়া মাটি ভরাটের পর বেহাল ঈশ্বরদী পৌর স্টেডিয়াম। পাথরের মতো শক্ত হয়ে যাওয়া এ মাটিতে প্রায় ঢেকে গেছে স্টেডিয়ামের স্থাপনাগুলো
এদিকে এত টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় স্টেডিয়ামের মাঠে খেলাধুলার পরিবর্তে পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তার নির্মাণকাজে ব্যবহূত যন্ত্র, যানবাহন ও নির্মাণসামগ্রী রেখে ব্যবহার করা হচ্ছে। দিনভর এই স্টেডিয়ামের মধ্যে বড় বড় ট্রাক-ট্রাক্টর দিয়ে পাথর, ইট, বালু, খোয়াসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়া আর পিচ জ্বালানোর কাজ চলে।
স্টেডিয়ামের এক পাশে প্রতিদিন শতাধিক গরু-মহিষ ও ছাগল জবাই করা হয়। গবাদি পশুর মলমূত্রের দুর্গন্ধে এখানে চলাফেরার উপায় নেই। এসবই চলে ঈশ্বরদী পৌরসভার তত্ত্বাবধানে। বিনা পয়সায় মাটি পেয়ে অপরিকল্পিতভাবে ভরাটের কারণে স্টেডিয়ামের পাকা ভবনের একাংশও মাটির নিচে চাপা পড়েছে। খেলোয়াড়দের জন্য তৈরি ড্রেসিংরুমের মোটর-ফ্যানসহ সবকিছু চুরি হয়ে গেছে। স্টেডিয়ামের এসব ঘরও এখন ব্যবহার করে পৌরসভার ঠিকাদারদের লোকজন।
ঈশ্বরদী পৌরসভা, রূপপুর প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে এ স্টেডিয়ামে মাটি ভরাট করা হয়।
সে সময় রূপপুর প্রকল্পের বিরাট এলাকাজুড়ে খনন করা বিপুল পরিমাণ উচ্ছিষ্ট মাটি ফেলার জায়গা পাচ্ছিল না কর্তৃপক্ষ। উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার পাশে, ময়লার ভাগাড়ে, বিভিন্ন এলাকার নিচু জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ফেলে রাখা হচ্ছিল এ মাটি। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী পৌরসভার পক্ষ থেকে রূপপুর প্রকল্পের সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্টেডিয়ামের নিচু জায়গা ভরাট করার জন্য অনুরোধ করা হয়। পরে বিনামূল্যে এ স্টেডিয়ামে প্রায় তিন হাজার ট্রাক মাটি ফেলে দেয় প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা। তবে কয়েক মাস যেতে না যেতেই স্টেডিয়ামের মাঠ মাত্রাতিরিক্ত শক্ত হয়ে ক্রমেই শিলাখণ্ডে পরিণত হতে থাকে। বছর যেতে না যেতেই পুরো স্টেডিয়ামের মাঠ ঘাসশূন্য হয়ে পড়ে।এ অবস্থায় স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই মাটি ছিল কেমিক্যাল-মিশ্রিত।
ঈশ্বরদী পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ জানায়, মাটি ভরাটের সময় তারা বুঝতে পারেননি যে এসব মাটি ভূমিপৃষ্ঠের বহু গভীর থেকে উত্তোলন করা কেমিক্যাল-মিশ্রিত।
ঈশ্বরদী পৌরসভার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল আউয়াল বলেন, বিষয়টি বুঝতে পারার পর আর কিছুই করার ছিল না। রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, এ মাটি যে পরে পাথরে রূপান্তর হতে পারে তা জানা ছিল না।
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহাক আলী মালিথা বলেন, ভুল যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন স্টেডিয়ামটি ব্যবহার-উপযোগী করার জন্য কী করা যায়, তা ভাবা হচ্ছে।
স্টেডিয়ামের মাটি পাথর হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করেই ঈশ্বরদীর খেলোয়াড়দের মধ্যে ঢাকা লিগে দুই ক্রিকেটার খেলছেন এখনও। পাবনা সাব-ডিভিশন লিগে ৫৮টি টিমের মধ্যে ঈশ্বরদী ক্রিকেট একাডেমি ফাইনালে উঠেছে। কাজী মেহেদী, শাহরিয়ার শান্ত, মারুফ হোসেনসহ কয়েকজন ক্রিকেটার এই ঈশ্বরদী থেকেই ঢাকার জাতীয় লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তবে এ স্টেডিয়ামে দুই বছর ধরে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না ক্রিকেটার ও ফুটবলাররা।
ঈশ্বরদী ক্রিকেট একাডেমির কোচ মারুফ হোসেন জানান, স্টেডিয়ামের এক কোণে পৌর মেয়রের সহায়তায় একটি পিচ তৈরি করে কোনো মতে তারা কয়েকজন ক্রিকেট খেলোয়াড়কে প্র্যাকটিস করানোর চেষ্টা করছেন। তবে স্টেডিয়ামের মধ্যে সব সময় নির্মাণসামগ্রীর গাড়ি চলাফেরা করায় তাও ব্যাহত হচ্ছে। ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড় খন্দকার তৌফিক আলম সোহেল বলেন, কিছু মানুষের ভুলে আজ স্টেডিয়ামটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। এটা খেলোয়াড়দের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
সূত্র : সমকাল