ঈশ্বরদীতে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান ও চাল মৌসুমে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ অভিযানে সফলতা এলেও ব্যর্থ হয়েছে ধান সংগ্রহ অভিযান। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ (৯৪%) চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ। তবে জেলায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ০.০২ শতাংশ।
জানা যায়, ঈশ্বরদী এলএসডি খাদ্য গোডাউনে এই মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩০১ টন, অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৩৩০ টন। এই গোডাউনে কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। অন্যদিকে মুলাডুলি সিএসডি খাদ্য গোডাউনে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৬৫১ টন, অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৫১৬ টন। আর ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১০ টন।
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ধানের বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় ধান সংগ্রহ কম হয়েছে। সরকারিভাবে ধান বিক্রির জন্য বিভিন্ন নিয়মকানুন ও হয়রানির কারণে সরকারিভাবে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বেশিরভাগ কৃষক ধান মাড়াই শেষে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। যার ফলে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ব্যর্থ হয়েছে এই উপজেলায়। তবে মিলাররা চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গুদামে চাল সংগ্রহ করেছেন।
স্থানীয় একাধিক কৃষক বলেছেন, গ্রাম্য হাট-বাজারগুলোয় ধানের দাম বেশি পেয়ে সরকার নির্ধারিত কম দামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ হারিয়েছেন বেশিরভাগ কৃষক।
উপজেলার মুলাডুলি গ্রামের কৃষক খালেক জোয়াদ্দার জানান, এ বছর ধানের বাজারদর একটু বেশি। সরকারি গুদামে ধান চেয়েছিল, দাম কম হওয়ায় সেখানে বিক্রি করিনি। লোকসান দিয়ে তো ধান বিক্রি করব না। উপজেলার প্রতিরাজপুর গ্রামের কৃষক মুরাদ মালিথা বলেন, ফড়িয়া আর মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে প্রতি বছর প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে সরকারিভাবে ধান দেয়ায় আগ্রহ কম। উপজেলা চাল কল মালিক সমিতির সভাপতি জুলমত হায়দার বলেন, উপজেলায় ৩২৫টি মিলের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। প্রায় সবাই চাল দিয়েছে। সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি লাইসেন্স বাঁচানোর তাগিদে, কেউ কেউ চাল সরবরাহ করলেও অনেকে করতে পারেনি। সরকার যদি চালের দাম ও সময় একটু বাড়িয়ে দেয় সেক্ষেত্রে আমরা মিলাররা যেমন লোকসানের হাত থেকে রেহাই পাব, তেমনি সরকারের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শরিফুল ইসলাম জানান, বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় ধান সংগ্রহ হয়নি। তবে চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পূরণ হয়েছে। তবে চুক্তি করে চাল না দিলে মিলগুলোর লাইসেন্স স্থগিত ও জামানত বাজেয়াপ্তের মতো শাস্তির আওতায় পড়তে হয় বলে বেশিরভাগ মিলারই সরকারের কাছে চাল বিক্রি করে। যে কারণে ধানের সংগ্রহে পিছিয়ে থাকলেও চালের সংগ্রহ ভালো হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকার এবার বোরো মৌসুমে সারাদেশ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা মণ হিসেবে ধান কিনেছে। চলতি মৌসুমে এই উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় কৃষকদের কাছ থেকে ৩৭৯ টন ধান এবং মিলারদের কাছ থেকে ১৮ হাজার ৬০২ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। গত ১ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।