ঈশ্বরদীর লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থীর পক্ষের কর্মী বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও মহড়া দিয়ে প্রকাশ্যে নৌকার ব্যালট পেপারের সিল মারার জন্য হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাণহানির ঘটনা না ঘটেনি। তবে লেগেই রয়েছে ছোট খাটো সহিংস্র ঘটনা। তাই ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ সুষ্টু রাখতে এবং ব্যালট পেপার ও ভোটারদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানের দাবীতে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বরাবর আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সদয় অবগতিসহ প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পাবনা জেলা প্রশাসক, র্যাব-১২ পাবনার কমান্ডার, পাবনা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঈশ্বরদী সার্কেল ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
গত বুধবার (২৪/১১/২১) লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস মার্কার সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুল হক মোল্লা লিখিতভাবে এই আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে আবেদনের বিষয়টি এই প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন প্রার্থী।
এর আগে গত বুধবার রাতে আনারস প্রতিকের বিলকেদা মোড়ে প্রধান নির্বাচনী অফিস, বিলকেদা মল্লিকপাড়া অফিস ও দাদাপুর হাট অফিসে হামলা চালিয়ে পোস্টাল ছিড়ে ও চেয়ার ভাংচুর করে নৌকার সমর্থকরা। একই সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী আনিছ মোল্লার গতিরোধ করা হয়। এই ঘটনায় নৌকা ও আনারস প্রতিকের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রাণহানির মতো সহিংসতার রূপ নেয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঈশ্বরদী সার্কেল, নির্বাচন কর্মকর্তা, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওসি তদন্তসহ পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
নির্বাচনীয় এলাকা লক্ষীকুন্ডা ঘুরে ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ সুত্রে জানা যায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর ছোট ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ এবার নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুল হক মোল্লা (আনারস) প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আনিস শরীফ নেতাকর্মীদের সঙ্গে অশালিন আচরণ, অবজ্ঞা করে চলায় নেতাকর্মী শুন্য হয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে আওয়ামীলীগ সরকারের কাঙ্খিত সেবা তৃণমুল পর্যায়ে পৌছে দিতে না পারায় ইউনিয়নের সাধারণ জন থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। পদধারী নেতাবাদে আওয়ামীলীগের অন্যান্য নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পক্ষ থেকে আনিছ মোল্লাকে স্বতন্ত্রঃপ্রার্থী করেছেন। নেতাকর্মীহীন ও জনশুন্য হয়ে নৌকার প্রার্থী আনিস শরীফ নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে ভাড়া করে আনা বহিরাগত আগ্নেয়াস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আনিস মোল্লার আনারস প্রতিকের নির্বাচনী অফিসে হামলা, ভাংচুর, পোস্টার ছিড়ে ফেলানো হচ্ছে। আনিস শরীফের পক্ষে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে আনারসের সমর্থকদের অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি প্রদান করছে। মোটর সাইকেল যোগে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। প্রকাশ্যে নৌকা ব্যালটে সিল মারার দাবী জানাচ্ছে। নৌকায় ভোট না দিলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি প্রদান করা হচ্ছে।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী আনিছুল হক মোল্লা জানান, নৌকার প্রার্থী আনিস শরীফ নেতাকর্মী শুন্য। জনবিচ্ছিন্ন। ভোটে নিশ্চিত পরাজয় জেনে ইউনিয়নে সন্ত্রাসীসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছেন। নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে ভাড়া করে আনা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইউনিয়নবাসীকে ভয়ভীতি প্রদান করে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছেন। মানুষের মাঝে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন, মহড়া দিচ্ছেন। নৌকায় ভোট না দিলে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। তার নির্বাচনী অফিসে হামলা, ভাংচুর, পোস্টাল ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। মানুষকে আতংকিত করা হচ্ছে। ল²ীকুন্ডা ইউনিয়নের ১,২,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। নৌকার প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভোট কেটে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আনিছ মোল্লা আরো জানান, ভোট কেন্দ্রের সুষ্টু পরিবেশ, ব্যালট পেপার ও ভোটারদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানের দাবীতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানানো হয়েছে।
নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ জানান, নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে ছোটখাটো ঝামেলায় পড়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে মানুষকে ভয়ভীতি প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, নৌকার পক্ষে দলীয় ছেলেরায় যথেষ্ট। ভাড়া করে সন্ত্রাসী যদি আনা হয় সেটা স্বতন্ত্রপ্রার্থী আনিছ মোল্লায় এনেছে বলে অভিযোগ করেন।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, বুধবার রাতে ল²ীকুন্ডার বিলকেদা মোড়ে নৌকা ও আনারস প্রতিকের প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিলো। পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করায় বড় ধরণের কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ সতর্ক রয়েছে। তবে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে নৌকার প্রার্থীর পক্ষ থেকে আনারস প্রার্থীর ২০/৩০ নামে একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঈশ্বরদী সার্কেল মোঃ ফিরোজ কবির জানান, সুষ্টু পরিবেশে নিরাপদে ভোট প্রদান শেষে ভোটারদের বাড়ি ফেরাতে পুলিশ কাজ করছে। নিরপেক্ষ ভাবে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখতে ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভোটে কোনরুপ কারচুরি করতে দেওয়া হবে না বলেও দাবী করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ঈশ্বরদী সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও লক্ষীকুন্ডা ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা খোন্দকার মাসুদ রানা জানান, স্বতন্ত্রপ্রার্থী আনিছুল হক মোল্লার করা আবেদন এখনো হাতে আসেনি। আসলে বিধিমোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয়ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঈশ্বরদী উপজেলার সাত ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলার মুলাডুলি, দাশুড়িয়া ও পাকশী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হিসেবে নৌকার প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এই কারণে তিন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদ বাদে সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে মেম্বার পদে এবং সাঁড়া, লক্ষীকুন্ডা, সলিমপুর ও সাহাপুর ইউনিয়নে সব পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।