বৃহস্পতিবার , ২৫ নভেম্বর ২০২১ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

উনিশতলা ভবনগুলো যেন মর্যাদারই প্রতীক

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
নভেম্বর ২৫, ২০২১ ৭:০২ অপরাহ্ণ

জাহীদ রেজা নূর : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমরা পুরোনো বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চোখে পড়ল কেন্দ্রের বাইরে সারি সারি মোটরসাইকেল। অদ্ভুত দৃশ্য! মোটর-সাইকেলগুলো কাপড় দিয়ে ঢাকা, যেন ধুলোয় অপরিচ্ছন্ন হয়ে না যায়। চট করে মনে হলো, এ এক বিরাট পরিবর্তন!


ঢাকার বাইরে কোনো শহরে একসঙ্গে এত উনিশতলা ভবন সম্ভবত নেই। এই বাড়িগুলোতেই থাকেন তিন হাজারের বেশি রুশ নাগরিক, কাজ করেন নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ঈশ্বরদীর রূপপুরে


রাস্তা থেকেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বেশ কিছু কাঠামো দেখা যাচ্ছে। যার একটি যে রিয়্যাক্টার, সেটা সহজেই বোঝা যায়। গেটপাস দিয়ে কেউ কেউ ঢুকছে কেন্দ্রে, কেউ বের হচ্ছে। শাঁ করে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট বাস। তাতে রুশ নাগরিকেরা যাচ্ছেন নিজস্ব আবাসে। সেখানে দুপুরের খাবার পর্ব সেরে আবার ফিরবেন কাজে।

সময় বেলা ১টা। আমাদের পথপ্রদর্শক বন্ধুর দেখা মেলে। তিনি জানিয়ে দেন, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত দুপুরের খাবারের বিরতি থাকে। এরপর আবার ফিরতে হয় কাজে।

গাড়ি ঘুরিয়ে আমরা ইপিজেডের পথে যেতে থাকি। সেদিকেই আমাদের থাকার জায়গা ঠিক হয়েছে। এক ধরনের রোমাঞ্চে ছেয়ে যায় মন। একটু পরেই আমরা এমন এক জায়গায় যাব, যা পরিণত হয়েছে এক টুকরো রাশিয়ায়। বহুদিনের পুরোনো একটি টানেলের ভেতর দিয়ে গাড়ি চলে যায় অন্যদিকে। টানেলের ওপর দিয়ে চলে গেছে রেললাইন। এই রেলপথের সুবাদেই, আরও নির্দিষ্ট করে বললে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কারণেই পাকশী একসময় নানা জায়গার মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছিল। সেই পাকশীরই একটা গ্রাম রূপপুর। সেই রূপপুরে এ রকম একটি কেন্দ্র হবে, সেটাও বছর ষাট আগের কথা।

আমরা রিসোর্টে পোঁছাই। পুরো পথে মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকেরা হেঁটে, সাইকেলে, মোটরসাইকেলে কিংবা ইজিবাইকে চড়ে কাজে যাচ্ছেন অথবা ফিরছেন। প্রত্যেকের চেহারাতেই তৃপ্তির রেশ। ব্যাগ-স্যুটকেস রেখে বিশ্রাম ছাড়াই গাড়ি ছুটে চলে গ্রিন সিটির দিকে।

গাড়ি ফের বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত গিয়ে বাঁয়ে মোড় নিল। এখানেই একটি বাড়ির দোতলায় খাবার দোকান। নাম ‘রুস কাফে’। বাংলায় লেখা আছে, তার সঙ্গে রুশ ভাষায়ও। এখান থেকে ছোট্ট রাশিয়ার সঙ্গে পরিচয়ের শুরু। পাশেই একটা সেলুন, সেখানে রুশ ভাষায় লেখা আছে ‘পারিখমাখেরস্কায়া’। ছোট ছোট দোকানেবাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি রুশ ভাষায় লেখা নাম।

প্রাথমিকভাবে রাস্তার দুপাশে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়ে না। শেষবারের মতো যখন বাঁয়ে মোড় নিল গাড়িটি, তার কিছুক্ষণ পরেই চোখের সামনে ভেসে উঠল সুউচ্চ দালানগুলো। হ্যাঁ, এবার মনে হচ্ছে, আমরা আলাদা কোথাও এসেছি, যা এই এলাকার পুরো আবহ থেকে আলাদা। ঢাকার বাইরে কোনো শহরে একসঙ্গে এতগুলো উনিশতলা ভবন আছে কি না, আমার জানা নেই। এই বাড়িগুলোতেই তিন হাজারের বেশি রুশ নাগরিকের বাস। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গড়ে তোলার জন্য তাঁরা এসেছেন বাংলাদেশে।

ভবনগুলোয় ঢুকতে অনুমতি লাগে। খুব দরকার না হলে রুশদেরও বাইরে আসা বারণ। কিন্তু মানুষ তো সব সময়ই নিষেধাজ্ঞা ভাঙতে ভালোবাসে। সেটাই আমাদের চোখে পড়ল। একটু পরপরই দেখা যায়, ললাট লিখন পড়েই রাস্তার ধারের দোকানগুলোয় ঢুকছেন রুশরা। তাঁরা কীভাবে কথাবার্তা চালান, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করি আমরা।
এখানে এসে কোন পরিবর্তনগুলো আমাদের চোখে পড়ে?

বিশাল অট্টালিকাগুলো মনে করিয়ে দেয় রাশিয়ার এক একটা মাইক্রোরাইয়নের কথা। সেসব মাইক্রোরাইয়ন যেন এক একটা শহর। সেই শহরের মধ্যেই আছে স্কুল, আছে দোকানপাট, আছে ব্যায়ামাগার, আছে পাঠাগার। জানতে ইচ্ছে করে, এই ভবনগুলোতেও সেই সব আছে কি না। স্কুলের বিষয়টি শুরুতেই খারিজ করে দিতে হলো। কারণ, এখানে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এসেছেন একা। পরিবার-পরিজন ফেলে।

বাড়িগুলোর বিপরীত দিকে রাস্তা পার হলেই গড়ে উঠেছে দোকানপাট। যেকোনো উন্নয়নের অনুষঙ্গ হিসেবেই এ ধরনের দোকানপাট গড়ে ওঠে। রয়েছে পরিকল্পিত স্থাপনা, রয়েছে অস্থায়ী সবজির মার্কেট। রয়েছে অসংখ্য ফলের দোকান। রূপপুরের বিশিষ্টজন অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আগে এখানে বলতে গেলে ফলের ব্যবসা ছিলই না। কে আপেল, নাশপাতি, আঙুর কিনে খাবে?’ রুশরা এখানে আসার পর ব্যাপকভাবে ফলের দোকানের জন্ম হয়েছে। অনেকেই ফল বিক্রি করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন।

পথে যে দোকান হয়েছে তার অনেকগুলোই খাবারের। কাপড়ের দোকানও আছে। সেখানে হাল ফ্যাশনের নানা কাপড়। আর আছে মুক্তোর জুয়েলারি। খাবার তালিকায় রয়েছে রুশ খাবার, বাংলাদেশি খাবার, চায়নিজ-থাই খাবার। কয়েকটি ক্লাব রয়েছে, যেখানে প্রবেশাধিকার শুধু রুশদের। যদিও লেখা আছে, ‘অনলি ফর ফরেনার্স’।

উনিশতলা ভবনগুলোর মূল ফটকের পাশে কম্বল আর গরম কাপড় নিয়ে বসে পড়েছেন একজন। বাংলাদেশের ফুটপাতের চিরাচরিত দৃশ্য। সেখানে এক এক করে রুশ নাগরিকেরা জড়ো হচ্ছেন। দরদাম করছেন। এই বিক্রেতারা নিজেদের ব্যবসার স্বার্থেই রুশ ভাষার প্রয়োজনীয় শব্দাবলি শিখে নিয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ এতটাই নিখুঁতভাবে রুশ উচ্চারণ করেন যে মনেই হয় না, এটা তাঁদের মাতৃভাষা নয়। এই শিক্ষা শুধু নেট থেকে আহরণ করা হয়নি। রুশদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই তা শেখা। ভাষাতত্ত্বে বলা হয়, ভিনদেশি ভাষা ঠিকভাবে শেখার সেরা উপায় হলো সে ভাষায় যারা কথা বলে, তাদের সঙ্গে মিশে যাওয়া। এখানে সেই তত্ত্বের বাস্তব উদাহরণ পাওয়া গেল।

এখানেই প্রথম যে দুজন রাশানকে পাওয়া গেল, তাঁরা গল্প করছিলেন নিজেদের মধ্যে। কথা বলা যাবে কি না, সেটা জানতে চাইলে তারা বললেন, ‘কেন যাবে না?’
শুরু হলো গল্প।


আরো পড়ুন :

ঈশ্বরদী-ব্রিটিশদের শহরে রুশদের দাপট

রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে বাষ্প জেনারেটর স্থাপন


 

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ