পাবনার ঈশ্বরদীতে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এক সপ্তাহ ধরে এখানকার তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। এ গরমে শুরু হয়েছে আবার ভয়াবহ লোডশেডিং। এ অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে কদর বেড়েছে চার্জারফ্যানের। কিন্তু বাজার ঘুরেও মিলছে না এ ফ্যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতদিন ধরে ঈশ্বরদী বাজারের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স শোরুম ও দোকান থেকে চার্জারফ্যান উধাও হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় এ সংকট বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দু-একটি শোরুমে চার্জার ফ্যান দেখা গেলেও দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুরে ঈশ্বরদী বাজারের স্টেশন রোডের আবিদ রানা প্লাজা ও আনখান মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো দোকানেই চার্জারফ্যান নেই। শুধু আমান ইলেকট্রনিক্সে স্বল্প সংখ্যক ফ্যান থাকলেও দাম সাধারণ গ্রাহকের নাগালের বাইরে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ডিফেন্ডার ১৬ ইঞ্চি একটি চার্জার ফ্যান সাতদিন আগে দাম ছিল ৫ হাজার টাকা এখন তা সাড়ে ৭ হাজার টাকা, কেনেডি ১২ ইঞ্চি ফ্যান সাতদিন আগে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রায় ৫ হাজার টাকা। তবুও চার্জারফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। রীতিমতো উধাও হয়ে গেছে চার্জার ফ্যান।
স্টার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমদানিকারকদের নগদ টাকা দিয়েও চার্জারফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা বেশি থাকায় সরবরাহ করতে পারছে না তারা। তাই বাজারে চার্জারফ্যানের সংকট দেখা দিয়েছে।
আরেক দোকানি শেখ আমান উল্লাহ বলেন, ১২ দিন চেষ্টার পর ঢাকা থেকে কয়েকটি চার্জারফ্যান দোকানে এনেছি। আমদানিকারকরা ফ্যানের সংকটের কথা বলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের কিছু করার নেই।
ফিরোজ ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্সের মালিক তানজিল রহমান ফিরোজ বলেন, চার্জারফ্যানের সংকটের কারণ হচ্ছে আমাদের আগে ফ্যানের চাহিদা ছিল সপ্তাহে ১০টি। গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে এক হাজার ক্রেতা চার্জারফ্যান কিনতে এসেছেন। হঠাৎ বিদ্যুতের সংকট ও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এটি হয়েছে। প্রতিটি আমদানিকারক চাহিদা অনুযায়ী ফ্যান দেয়। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার আমদানিকারকরা দোকানদারদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যান দিতে পারছেন না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চার্জার ফ্যান দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন।
ঈশ্বরদী ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, আমদানিকারকদের কাছে চার্জারফ্যানের মজুত ফুরিয়ে গেছে। বিদ্যুতের হঠাৎ বিপর্যয়ের কারণে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ সংকট।
দ্বিগুণ দামে চার্জারফ্যান বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই। আমাদের কাছে চার্জার ফ্যান নেই তাই বেশি দামে বিক্রির সুযোগও নেই।’
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা যায়, নেসকোর অধীনে ঈশ্বরদীতে বিদ্যুতের চাহিদা ৩৭ মেগাওয়াট। কিন্তু প্রতিদিন এখানে বিদ্যুতের সরবরাহ থাকে ২৭-২৮ মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে দিনে ৮-১০ বার লোডশেডিং হয়।
পিজিসিবির ঈশ্বরদীর জয়নগর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাময়িক ঘাটতির কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।
ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও প্রচণ্ড গরমের কারণে অন্যবারের তুলনায় মানুষ এবার বেশি চার্জার ফ্যান কিনছে। এতে ফ্যানের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে।