শুক্রবার , ১৪ এপ্রিল ২০২৩ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. নির্বাচন

ঈশ্বরদীতে শত বিঘার রেশম বীজাগার এখন ‘পরিত্যক্ত’

প্রতিবেদক
আমাদের ঈশ্বরদী রিপোর্ট :
এপ্রিল ১৪, ২০২৩ ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ

১৯৬২ সালে উপজেলার অরনকোলা এলাকায় ১০৭ বিঘা জমির ওপর রেশম বীজাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।


‘করো যদি রেশম চাষ, আসবে টাকা বারো মাস’, ‘উন্নত জাতের পলু পালন করি, সমৃদ্ধিশালী দেশ উন্নয়নে সহযোগিতা করি।’ পাবনার ঈশ্বরদী রেশম বীজাগারের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতে দুই পাশের দেয়ালে লেখা রয়েছে এমন সব স্লোগান। কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই সুনসান নীরবতা। জনমানবের দেখা নেই। রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে রেশমবাগান। পরিত্যক্ত ভবনের দেয়াল থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা।

দীর্ঘদিনের অযত্ন ও অবহেলায় এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের বিবাদে কর্মস্থল ছেড়েছেন দুই পক্ষই। প্রায় ১০৭ বিঘা জমির ওপর নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি পরিণত হয়েছে ভূতের বাড়িতে।

বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে উপজেলার অরনকোলা এলাকায় ১০৭ বিঘা জমির ওপর রেশম বীজাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৫৯ বিঘা জমিতে আবাদ করা হয় তুঁতগাছ। বাকি ৩৮ বিঘা জমিতে অফিস, আবাসিক ভবন, পলু পালন ঘর, তাঁতঘরসহ ১৯টি ভবন ও চারটি পুকুর তৈরি করা হয়। ফার্ম ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন পদে ছিল ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শতাধিক শ্রমিক।

বীজাগারের কয়েকজন শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, বীজাগারটি চালুর কিছুদিনের মধ্যেই জমজমাট হয়ে ওঠে। তুঁতগাছে সবুজ হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। তুঁতগাছের চারা উৎপাদন, পলু পোকা পালন, রেশম ডিম ও গুটি উৎপাদনের পাশাপাশি চলতে থাকে সুতা তৈরির কাজ। কর্মচাঞ্চল্যতায় মুখোর হয়ে ওঠে পুরো এলাকাটি। এখানকার তৈরি সুতা সরবরাহ করা হতো রাজশাহীর সিল্কপল্লিতে।

শ্রমিক-কর্মচারীরা বলেন, লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ করেই লোকসানের পথে যেতে থাকে। শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া হতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বিরোধ তৈরি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে পুরোপুরি শ্রমিকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারাও অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকেই দিনে দিনে ধ্বংস হতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হয় ৫০ হাজার তুঁতগাছ। পরিত্যক্ত হয় ভবনগুলো।

গত সপ্তাহের বুধবার দুপুরে দেখা যায়, পুরো বীজখামারটিতে সুনসান নীরবতা। একজন প্রহরী ছাড়া ভেতরে কেউ নেই। প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে প্রথম ভবনটি পরিত্যক্ত। পাশের অফিসকক্ষটি তালাবদ্ধ। ভেতরে প্রতিটি ভবনই পরিত্যক্ত। দরজা-জানালা ভাঙা। খুলে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা। পুকুরগুলো ময়লা–আবর্জনায় ঠাসা। অযত্ন-অবহেলায় মারা যাচ্ছে তুঁতগাছ।

প্রধান ফটকে কথা হয় দায়িত্বরত প্রহরী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে এখন তেমন কেউ নেই। অনেক জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে তাঁর তত্ত্বাবধানে কিছু তুঁতগাছের চারা তৈরি কাজ শুরু হয়েছে। অন্য সব কর্মকাণ্ড বন্ধ।

বীজাগার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুবল সরকার বলেন, অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখানে পলু পালন, রেশম ডিম, রেশম গুটি উৎপাদন বন্ধ করে দেন। ৩০ বছর কাজ শেষে শ্রমিকেরা অবসরে যাওয়ার সময় খালি হাতে বিদায় নেন। তাঁরা এখন খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলাউদ্দিন ফকির বলেন, শুধু কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই দেশের এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেল। এখনো এখানে সম্ভাবনা আছে। কর্তৃপক্ষ একটু নজর দিলে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বীজাগারের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক হায়দার আলী বলেন, ২০১৮ সালের পর আড়াই বছর বীজাগারটি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে এখানে স্বল্প পরিসরে তুঁতের চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে। রেশম উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনায় বিনা মূল্যে চাষিদের মধ্যে এসব চারা বিতরণ করা হচ্ছে। অন্য কার্যক্রম আপাতত বন্ধ। অর্থ বরাদ্দ পেলে সেগুলোও চালু করা হবে।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

error: Content is protected !!