তুলনামূলক কম খরচে এবারে গমের বাম্পার ফলন হওয়ায় ঈশ্বরদীর কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক সেচ, কীটনাশক সার, শ্রমিক থেকে শুরু করে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় গমের আবাদে খরচ কম। হার্ভেস্টার মেশিনে গম কাটা ও মাড়াইয়ে খরচও পড়ছে অনেক কম। এ কারণে গম চাষ করে কৃষকরা হচ্ছেন লাভবান। এরই মধ্যে আগাম বোনা গম কাটও শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলায় গমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষিবিভাগ।
কৃষকরা জানান, গম চাষে এবারে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় পোকামাকড় তেমন আক্রমণ করতে পারেনি। এজন্য বাড়তি কীটনাশকেরও প্রয়োজন পড়েনি। গম কেটে যারা ঘরে তুলতে শুরু করেছেন, তারা বলেন বিগত বছরের তুলনায় এবারে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। জমির গম মাড়াই করে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ মণ গম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি মণ গম বাজারে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা দাম পাচ্ছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীর ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মাঠে রয়েছে গমের আবাদ। সরকারিভাবে মৌসুমের শুরুতে বিনামূল্যে এক হাজার কার্ডধারী কৃষকদের উন্নত জাতের বারি গম বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। গম চাষে কৃষকদের আরও বেশি আগ্রহী করতে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে কিভাবে ফলন বাড়ানো যায় সে বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে স্থানীয় কৃষি অফিস।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সোনালি আধা পাকা শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। কোন কোন জমিতে গম এখনও কাঁচা আছে। তবে আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে গম পেকে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন চাষিরা।
সাঁড়া ইউনিয়নের আরামবড়িয়া ব্লকের গোপালপুর গ্রামের শিক্ষিত কৃষক অধ্যাপক আলমাস আলী জানান, তিন বিঘা জমিতে এবারে গমের আবাদ করেছেন। সার ও বীজের দাম বেশি হওয়ায় এবারে বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ভালো ফলনের আশায় তিনি বারি-৩৩ জাতের গমের আবাদ করেছেন। তিনি প্রতি বিঘায় ১৫ মণ ফলনের আশা করছেন। এদিকে গমের বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় অন্য কৃষকেরাও গম চাষে আগ্রহী হয়েছেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, উপজেলায় কমবেশি সব এলাকায় গমের আবাদ হয়েছে। সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও তদারকি করছে উপজেলা কৃষি অফিস। এবারে ১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বেশী পরিমাণে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। মোট ৭ হাজার ১৯৬ মেট্রিক টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। কৃষকদের বারি-৩৩, বারি-৩২, বারি-৩১ ও বারি-৩০ জাতের গম আবাদের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের বিনামূল্যে সার, উন্নতজাতের বারি গম বীজ বিতরণ করা হয়েছে। হার্ভেস্টার মেশিনে গম কাটা ও মাড়াইয়ে খরচও পড়বে অনেক কম। অন্য বছরের চেয়ে এবছর গমের বাম্পার ফলন হবে ও ভালো দাম থাকায় কৃষকেরা লাভবান হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।