শিক্ষক পদে চাকরি না পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেন চাকরিপ্রত্যাশী শফিকুল ইসলাম ও তার স্বজনরা। রোববার (৫ মার্চ) সকালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নে পিজিসিবি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, পিজিসিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য জয়নগরের হাজিপাড়া এলাকায় একটি পকেট গেট রয়েছে। রোববার সকালে হাজিপাড়ার আতিয়ার রহমান প্রামাণিকের তিন ছেলে সিরাজুল ইসলাম, আফজাল হোসেন ও শফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথের রাস্তাটি কাঁটাতারের বেড়া ও গাছের ডালপালা ফেলে বন্ধ করে দেন। সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে কাঁটাতারের বেড়া দেখে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। বিক্ষুব্ধ চার শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কাঁটাতারের বেড়া অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।
খবর পেয়ে সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা ঘটনাস্থলে আসেন। এছাড়া থানা থেকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে বিক্ষোভের মুখে সেই কাঁটাতারের বেড়া খুলে দেওয়া হয়। সরিয়ে ফেলা হয় গাছের ডালপালা।
পিজিসিবি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, শফিকুল ইসলামকে অস্থায়ীভাবে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে এ পদে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে শফিকুল ইসলাম আবেদন করেন। তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় তার চাকরি স্থায়ীকরণ হয়নি। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি পিজিসিবি কর্তৃপক্ষ দেখভাল করেছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি চাকরি না পেয়ে তাদের জমির পাশের বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ পথ দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। বিষয়টি আমরা ইউএনও, ওসিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পিজিসিবি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয়ে আমার ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম চাকরি করায় আমাদের নিজস্ব জমিতে রাস্তা করে দিয়েছিলাম। পিজিসিবি কর্তৃপক্ষ আমার ভাইকে কয়েক বছর চাকরি করার পরও স্থায়ীকরণ না করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই চাকরির বিষয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা চলমান। আমাদের দাবি, শফিকুলের চাকরি যেন স্থায়ীকরণ করা হয়।
সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা বলেন, বিষয়টি শুনেই তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলাম। বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ করা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এই রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ বরাদ্দ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধা হয়।
ঈশ্বরদী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে কাঁটাতারের বেড়া ও গাছের ডালপালা সরিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য রাস্তাটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, ঘটনা শুনেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ তাৎক্ষণিক রাস্তাটি খুলে দিয়েছে। রাস্তাটি যে বা যারা বন্ধ করুক না কেন অবশ্যই তারা অন্যায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।