রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৪ কোটি টাকা। এই সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে থেকে যাচ্ছে ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। স্থানীয় লোকজন এসব বাঁকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এই সড়ক নির্মাণ করছে। তারা বলছে, এই সড়ক জেলা পরিষদের। জমি তাদের। রাস্তাটি শুধু সওজকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ কারণে তারা জমি অধিগ্রহণ করতে পারছে না। আপাতত বাঁক রেখেই রাস্তার কাজ শেষ করতে হবে। পরে অন্য প্রকল্প নিয়ে সড়ক সোজা করতে হবে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর থেকে চারঘাট-বাঘা-নাটোরের লালপুর হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত এই সড়কের দৈর্ঘ্য ৫৪ কিলোমিটার। বর্তমান সড়কটি রয়েছে ১৮ ফুট চওড়া। নতুন সড়ক হবে ৩৪ ফুট। বাজার এলাকাগুলোতে পাশে নালা নির্মাণ করা হচ্ছে। এই সড়কের শুধু চারঘাট ও বাঘা উপজেলার মধ্যেই থাকছে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক।
সড়কের আশপাশের স্থানীয় লোকজন বলছেন, এখন উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের দ্রুতযানগুলো এই সড়কে চলাচল করবে। আগের সরু সড়কটি এখন আঞ্চলিক মহাসড়ক হচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা ছিল, মহাসড়ক হওয়ার সময় বাঁকগুলো যতটা সম্ভব সোজা করে দেওয়া হবে। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কাও কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা করা হচ্ছে না।
সড়কটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে বাঘা উপজেলার মধ্যেই থাকছে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক।
চারঘাটের সরদহ ট্রাফিক মোড়, পাইলট স্কুল মোড়, ফকিরের মোড় ও সিনেমা হল মোড়গুলো পৌর এলাকার মধ্যে পড়েছে। এসব মোড় আগের সরু রাস্তায় যে রকম ছিল, রাস্তা বড় হলেও ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। একইভাবে বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নে পাঁচটি, বাজুবাঘার চণ্ডিপুর বাজারের পূর্ব পাশে চার ও নাটোরের লালপুর উপজেলা সদরে প্রবেশের মুখে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুটি বাঁক।
গত মঙ্গলবার চারঘাট বাজারের দক্ষিণ পাশে ফকিরের মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণের আগেই সেখানে নালা নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। এই মোড়ের নালা একেবারে ‘এল’ আকারের অর্থাৎ ৯০ ডিগ্রি কোণের মতো বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে।
সাব্বির আহাম্মেদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, আগে থেকেই এই মোড়ে দুর্ঘটনার পরিমাণ বেশি। এখন দূরপাল্লার গাড়ি চলবে। রাস্তাও হচ্ছে আরও বাঁকা। মানুষ মরলে তারপর কর্তৃপক্ষ নতুন প্রকল্প হাতে নেবে, এটা বেদনাদায়ক।
এই মোড়েই দোকান রয়েছে মোশাররফ হোসেন নামের একজনের। তাঁর দাবি, এই মোড়ে রাস্তার প্রস্থের অর্ধেক পর্যন্ত তাঁর জমি রয়েছে। সওজের লোকজনই মেপে দেখেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সওজের রাজশাহীর সহকারী পরিচালকের কাছে ১ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মোশাররফ বলেন, তাঁর জমির বিপরীত পাশ থেকে জমি অধিগ্রহণ না করলে এই সড়কের বাঁক আরও বেশি হবে। রাস্তার ওপর পাশে সরকারি এক নম্বর খাস খতিয়ানের জমি রয়েছে। সেগুলো ছেড়ে দিয়ে বাঁকা করে রাস্তা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে চারঘাট এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে সওজের গাড়ি নিয়ে আসেন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ মো. আসিফ। তিনি বলেন, বাঁকের ব্যাপারটি সম্পর্কে তাঁরা অবগত আছেন। নালা যতটা বাঁকা দেখাচ্ছে, সড়ক অতটা বাঁকা হবে না। তাঁরা দুর্ঘটনা রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন।
মো. আসিফ আরও বলেন, এই সড়কের জমির মালিক জেলা পরিষদ গেজেটের মাধ্যমে শুধু রাস্তাটা সওজকে হস্তান্তর করেছে। সওজের জমি যতটুকু আছে, তাঁরা সবটুকুই নিয়েছেন। কোথাও জমি ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এরপরেও বাঁক সোজা করার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা দরকার। এখন এই প্রকল্পের সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু করলে রাস্তাটিই হতো না। তাই তাঁরা ভেবেছেন, আগে রাস্তাটা হোক। পরে বাঁক সরলীকরণের প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে।