শনিবার , ৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. নির্বাচন
  14. পাবনা
  15. ফিচার

‘আমি তো এই জ্বালা সবের পাতেছিনে’

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
জানুয়ারি ৭, ২০২৩ ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ
‘আমি তো এই জ্বালা সবের পাতেছিনে’

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে লিপি খাতুনের। একমাত্র সন্তান মামুন হোসেন (২০) ছিলেন তাঁর রুটিরুজি ও বেঁচে থাকার অবলম্বন। বাড়িতে একা থাকতেন। তাই দেড় বছর আগে ছেলেকে বিয়ে দেন। ছেলে রিকশা চালিয়ে যা আয় করতেন, তা দিয়েই চলত তাঁদের তিনজনের সংসার। সেই ছেলে যুবলীগের নেতার ভাইয়ের গুলিতে নিহত হওয়ার পর লিপি খাতুন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

ছেলে হত্যার বিচার দাবিতে লিপি খাতুন স্বজনদের নিয়ে শুক্রবার বিকেলে পাবনার ঈশ্বরদী থানার ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাঁদের শান্ত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

গত বুধবার রাতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পশ্চিম টেংরি কড়ইতলা এলাকায় নছিমনচালকের সঙ্গে এক লেগুনাচালকের বিরোধ তৈরি হয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে কয়েকজন যুবক সেখানে এসে বিরোধে জড়ান। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ধস্তাধস্তি চলাকালে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর কামাল উদ্দিনের ভাই আনোয়ার হোসেন সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করে গুলি চালান। এতে রিকশাচালক মামুন হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নিহত মামুনের মা লিপি খাতুন বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলায় যুবলীগ নেতা কামাল উদ্দিনকে প্রধান আসামি ও তাঁর ভাই আনোয়ার হোসেনকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনও যুবলীগের নেতা হিসেবে পরিচিত।

মামলার এজাহার ও থানা ফটকে থাকা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার সময় যুবলীগ নেতা কামাল উদ্দিনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর নির্দেশেই আনোয়ার হোসেন পিস্তল বের করে গুলি চালান। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা অপর আসামিরা চাকু দিয়ে অন্যদের কোপাতে থাকেন। এতে ছুরিকাহত হন স্থানীয় যুবক সুমন হোসেন ও গুলিবিদ্ধ হন রকি হোসেন। রকি হোসেনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর সুমন হোসেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শুক্রবার বিকেলে ঈশ্বরদী থানা ফটকের সামনে মামুন হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে তাঁর স্বজনসহ বেশ কিছু নারী-পুরুষকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এ সময় ‘মামুন হত্যার বিচার চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’ স্লোগানও দেওয়া হয়। সেখানে আহাজারি ও বিলাপ করে এদিক-ওদিক ছুটতে দেখা যায় লিপি খাতুনকে। বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমার বেটারে তোরা কেন মারলি রে, আমি তো এই জ্বালা সবের পাতেছিনে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লিপি খাতুন বলেন, ‘শীতের রাতে আমার ছাওয়াল মা-বউয়ের মুখে খাওয়ানোর জন্যি রিকশা চালাবের গেছিল। খবর পায়া যায়া দেহি, সেই ছাওয়াল আমার মাটিত পড়ে আছে। গাওডা (শরীরটা) বরফের মতো ঠান্ডা। আমি আর কিছুই চাইনে। আমার ছেলে হত্যার বিচের চাই।’

থানা ফটকের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন নিহত মামুনের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন। কান্নারত অবস্থায় শুধু একটি কথাই বললেন তিনি, ‘কিছুই চাইনে, বিচের চাই।’ সেখানে নিহত মামুনের খালা রানী খাতুন বলেন, তাঁর বোন বহু কষ্টে মামুনকে বড় করেছিলেন। ছেলেটাই ছিল তাঁর একমাত্র অবলম্বন। সেই ছেলে হারিয়ে তাঁর বোন এখন পাগলপ্রায়। তিন দিন ধরে তাঁকে কিছু খাওয়ানো পর্যন্ত যায়নি।

নিহত মামুনের মামা মুন্না হোসেন বলেন, ঘটনায় পুরো এলাকার মানুষ হতভম্ব হয়ে গেছেন। সামান্য একটা কারণে এভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা কেউ মেনে নিতে পারছেন না। প্রত্যেকে এই হত্যার বিচার দাবি করছেন।

এদিকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন ও তৃতীয় আসামি ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হৃদয় হোসেনকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে। তবে গুলি ছোড়া আনোয়ার হোসেন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা তদন্ত শুরু করেছি। যুবলীগ এ ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, ঘটনার পর থেকেই আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। দুজনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। শিগগিরই তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ঈশ্বরদীতে যুবলীগ নেতার ভাইয়ের গুলিতে রিকশাচালক মামুন নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় থানা চত্বরে বিক্ষোভ করেন স্বজনেরা।


নানা অপকর্ম জড়িত অভিযুক্ত আনোয়ার

যুবলীগ নেতা ও কাউন্সিলর কামাল উদ্দিনের ভাই আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এর আগে একটি হত্যাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি হয়েছে। এই বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রেলের তেল চুরি সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে।

ঈশ্বরদী থানা সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর উপজেলা সদরের রহিমপুর এলাকায় রেলওয়ের একটি বাড়ি বিক্রির টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে মাসুদ রানা নামের এক যুবককে হত্যার আসামি ছিলেন আনোয়ার হোসেন। পরে এজাহার থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মারামারির দুটি, মাদকের একটি ও চুরির একটি মামলা আছে।

ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, আনোয়ারের বিরুদ্ধে থানায় বেশ কিছু অভিযোগ থাকলেও তাঁর কাউন্সিলর ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো লিপিবদ্ধ অভিযোগ নেই। তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। এ বিষয়ে কিছু বলাও ঠিক হবে না। তবে সব বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন :

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

দুঃখিত,এই ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করা নিষিদ্ধ