গতবারের চেয়ে অনেক বেশি শীত পড়েছে। এমনটাই বলছেন উত্তরবঙ্গের মানুষেরা।বিশেষ করে তীব্র শৈত প্রবাহে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীসহ আশপাশের অঞ্চলে হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে।
তবুও শীত উপেক্ষা করে পুরোনো রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদী স্টেশনের তিন নম্বর প্লার্টফর্মে একটি পানের দোকান জুবুথুবু বসে আছেন দোকানি আব্দুল বারী।
কেমন শীত পড়েছে প্রশ্নে ষাটোর্ধ বয়সী এই পান দোকানি বললেন, ঠাণ্ডায় দাঁতের সঙ্গে দাঁত কামড় খাচ্ছে। শীত এত বেশি যে, শরীর বেঁকে যেতে চাচ্ছে ধনুকের মতো। ঠাণ্ডা কনকনে বাতাস। হাত-পা বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়্যা কাঁপ উঠি যাচ্ছে। আমরা খালি (শুধু) পেটের দায়ে পড়ে থাকি স্টেশনে!
শুক্রবার (৬ জানুয়ারী) সকালে স্টেশনের প্লার্টফর্মে কনকনে শীতে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলছিলেন আব্দুল বারী।
আক্ষেপ করে বারী বাংলানিউজে বলেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডাতে ট্রেনের যাত্রীরা সব ট্রেনের ভেতরে বসে থাকে। কেউ দরকার ছাড়া সহজে নামতে চায় না। অন্য সময়ের তুলনায় শীতের সময় ইনকাম কম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু চা বিক্রি করে প্রায় তিনশো টাকা আয় করা কঠিন হয়। পরিবারের কথা ভাবলে নিজের খেয়াল রাখা কঠিন।
স্টেশনের দুই নম্বর প্লার্টফর্মের পান দোকানি হাবিবুল ইসলাম হাবিব আক্ষেপ করে বলেন, পৌষের শীত এবার বেশ তীব্র, সঙ্গে কনকনে বাতাস। হাত-পা বরফের মতো পাথর হয়ে যায়। দোকানদারি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কি করব ভাই! উপায় নাই। যদি একদিন বাজার না করি দোকানে যদি না আসি, সেদিন আর হাঁড়িতে ভাত রান্না হয় না। নিজেরই কষ্ট হোক।
স্টেশনসংলগ্ন রিকশাস্ট্যানে বসে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক আব্দুর রহমান বলেন, শীত ঠেঁকাতে না পারলে খড়কুটা দিয়ে শীত নিবারণ করার সামান্য চেষ্টা করা হয়। কনকনে ঠান্ডায় কোনো সরকাার- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কতো সহযোগিতা করে শুনি। কম্বল, চাদর দিতে শুনি। কই কেউ কোনোদিন এসে আমাদের একটা কম্বল দেয়নি।
এমন অভিযোগ শুধু আব্দুল বারী, হাবিবেরই না। ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনে অর্ধশত দোকানদার এমন দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ, যারা শীতের সময় সহযোগিতা করতে আসেন, আমরা মুখ ফুটে তাদের কাছে বলতে পারি না। চাইতেও পারি না। তাই আমাদের কিছুই মেলে না।
এবার উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পৌষের মাঝামাঝিতে কনকনে শীত বয়ে যাচ্ছে। আর হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া দৈনিক আয়ের মানুষেরা। শীতকে উপেক্ষা করে জীবন-জীবিকার জন্য কাজের উদ্দেশ্যে বের হতে হয়। কাজ করলে সংসারে খাবার জোটে এসব অসহায় দরিদ্র মানুষদের।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. নাজমুল হক রঞ্জন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, কুয়াশা কম, সূর্যের আলোর দেখা না পাওয়ায় শীত জেঁকে বসেছে। তবে পৌষের শেষ সপ্তাহের শুরুতে তাপমাত্রা সামান্য কিছুটা বাড়বে, সূর্যের আলোর দেখা মিলবে। চলতি সপ্তাহে দুপুর থেকে সূর্যের মুখ সামান্য দেখা গেলেও উজ্জ্বল রোদের কোনো উষ্ণতা কম।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারী) ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইউএনও) পি.এম. ইমরুল কায়েস জানান, যা বরাদ্দ পেয়েছিলাম। শেষ হয়ে গেছে। আবার যদি সরকারি বরাদ্দ মেলে আবার সহযোগিতা করব।