পাবনার ঈশ্বরদীতে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৩-৪ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। রোববার (২৭ অক্টোবর) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজিদ হোসেন (১৩) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। নিহত সাজিদ উপজেলার জয়নগর গ্রামের কালু প্রামাণিকের ছেলে ও জয়নগর পিজিসিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন ও অক্টোবরের ২৭ তারিখ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন। বেসরকারি ইম্পেরিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অন্তত ২১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বিগত দুই মাসে। উপজেলার অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডে ৮-১০ জন রোগী জ্বরজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এরমধ্যে পরীক্ষা করে ৩-৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ডিউটি নার্স মোছা. রুবিনা খাতুন। বর্তমানে পুরুষ ওয়ার্ডে ২০ জন ও নারী ওয়ার্ডে ৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়াও আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের শ্রমিক বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটছে। এডিস মশার লার্ভা নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকায় ঈশ্বরদীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বলে স্থানীয়রা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ড. শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আসছে। রোগের ধরনও পাল্টাচ্ছে। শরীরে ব্যথা, জ্বর কিংবা অন্য কোনো উপসর্গ নিয়ে এলেই রক্তের ধারা (সিবিসি) পরীক্ষা করতে বলা হয়। শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ ৪৫ হাজারের নিচে হলে পাবনা, রাজশাহী কিংবা ঢাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে এডিশ মশা লার্ভা ছড়াচ্ছে। এসময় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে যেন কোথাও পানি জমে না থাকে, পাশাপাশি মশা নিধনও জরুরি।
কর্মকারপাড়া-নূরমহল্লা এলাকার মামুনুর রশীদ নান্টু বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে মশা বা লাভা নিধনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। ফেসবুকে দেখেছি ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এবং অনেক এলাকাতে এখনো ওষুধ ছিটানো হয়নি। যে কারণে মশার প্রকোপ চরমভাবে বেড়েছে।
ঈশ্বরদী পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (পিএনও) মো. জুহুরুল ইসলাম মশা নিধন প্রসঙ্গে বলেন, পৌরসভার মাত্র ৪টি মেশিন দিয়ে পর্যায়ক্রমে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বৃষ্টি হলে ছিটানো ওষুধ কোনো কাজ করে না। তাই ৩-৪ দিন ধরে বৃষ্টি থাকার কারণে কাজ বন্ধ ছিল। তাছাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।