পাবনার ঈশ্বরদীর মাঠে মাঠে চলছে মধু সংগ্রহের কাজ। ফুলে ফুলে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌমাছিরা। সরিষা ক্ষেতের পাশে সারি সারি মৌবক্স।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করলে মৌমাছি মধু সংগ্রহের ফলে পরাগায়ন বৃদ্ধি পেয়ে ফলন বেশি হয়। অন্যদিকে মধু বিক্রি করে বিপুল অর্থ উপার্জন হয়। এর আগে মধু আহরণের কোনো লক্ষ্যমাত্রা না থাকেলেও গত কয়েক বছরে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌচাষিরা এসেছেন ঈশ্বরদীতে। গ্রামে গ্রামে মধু সংগ্রহের জন্য সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে মৌবক্স। এসব বক্সের ভেতর রয়েছে একটি রানী মৌমাছি। রানী মৌমাছির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে কর্মী মৌমাছি বক্সের ভেতরের চাকে মধু জমা করে। এই চাক থেকেই প্রতিদিন মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করেন।
সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে মধু সংগ্রহের বক্স। ঈশ্বরদীর ৭টি ইউনিয়নে এ চিত্র দেখা গেছে। মৌচাষিরা জানান, প্রতি বছরই তারা ঈশ্বরদী উপজেলায় লিচু ও সরিষার মধু সংগ্রহ করতে আসেন। বক্স পদ্ধতিতে সংগ্রহ করেন। প্রতি বক্স থেকে সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৩০০ কেজির মতো মধু সংগ্রহ করে থাকেন তারা।
উপজেলার সাহাপুর গ্রামের সালাম শেখ জানান, এবার তিনি ১০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। বিঘাপ্রতি ৬-৭ মণ সরিষা ঘরে তুলবেন বলে আশা তার। ক্ষেতের পাশে কৃত্রিম উপায়ে চলছে মধু সংগ্রহের কাজ। মৌখামারি সিরাজ প্রামাণিক ক্ষেতের পাশে ৭০টি মৌবক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহের কাজ করছেন।
সিরাজ প্রামাণিক বলেন, ‘প্রতিটি বক্সে মৌরানী থাকে। অসংখ্য মৌমাছি ৩ কিলোমিটারের মধ্যে সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে রানীর কাছে ফিরে আসে। খামারিরা সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ বছর প্রায় ২ টন মধু সংগ্রহ করতে পারবো বলে আশা করছি।’
মধু সংগ্রহের জন্য সাতক্ষীরা থেকে এসেছেন আশিকুর রহমান। তিনি জানান, প্রতি বছরই কয়েকজন মিলে ঈশ্বরদী উপজেলা থেকে মধু সংগ্রহ করেন। উপজেলার পতিরাজপুর গ্রামে ২০০টি মৌবক্স বসিয়েছেন। প্রতিটি বক্স থেকে সপ্তাহে গড়ে ৩০০ কেজি মধু সংগ্রহ করছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘উপজেলায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। বেশ কয়েকটি গ্রামে মধু সংগ্রহ চলমান। এর মধ্যে এক দল ৩৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করেছে বলে কৃষি অফিসকে জানিয়েছে। মৌসুমের শেষে জানা যাবে কত মণ মধু সংগ্রহ হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ‘সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে ফলন ১০-২০ ভাগ বেড়ে যায়। সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন; অন্যদিকে সরিষার ফলনও বাড়ছে।’