ঈশ্বরদীতে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানের ডিমের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। ফার্মে প্রতিটি ডিমের দাম চার টাকা থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পাইকারি বাজারে এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকায় আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এদিকে অতি দ্রুত ডিমের দাম কমে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা খুশি হলেও খামারিদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা।
জানা গেছে, কোনো কারণ ছাড়াই বিগত চার মাস আগে থেকে ডিমের দাম বাড়তে থাকে। পাইকারিতে এক ডজন ডিম ১৬০ টাকা, অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম সাড়ে ১৩ টাকায় ওঠে। খুচরা বাজারে এক ডজন ডিম ১৮০ টাকা, অর্থাৎ প্রতিটি ডিম ১৫ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। এ অবস্থায় সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সরকার প্রতিটি ডিমের খুচরা দাম ১২ টাকায় বেঁধে দেয়। তারপরও দাম কমেনি। এদিকে গত ৫ নভেম্বর ভারত থেকে ডিমের একটি চালানের মাধ্যমে দেশে আমদানি হয় ৬১ হাজার ৯৫০ পিস ডিম। এরপর থেকেই দ্রুত কমতে শুরু করে ডিমের দাম।
বাজারে ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। আমদানির কারণে ডিমের দাম কমেনি জানিয়ে পাইকাররা বলেন, বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। বাজারে এখন শীতের সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ডিমের ওপর চাপ কমেছে।
কলেজ রোডের ডিম আড়তের খায়রুল জানান, সোমবার বাজারে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এখন আড়তে ৩০টির খাচি বিক্রি করছেন ২৭০ টাকা, অর্থাৎ প্রতিটি নয় টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৪ টাকায়। তিনি জানান, খামারিদের কাছ থেকে ১০০ পিস ডিম ৮৬০-৮৭০ দরে কিনে প্রতিটি নয় টাকায় পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দাম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত খামারি ও পাবনা জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন জানান, বাজারদর অনুযায়ী খামারিরা ১০০ পিস ডিম ৮৬০-৮৭০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এর আগে খাদ্যের দাম ব্যাপক বাড়লেও এখন আবার কিছুটা কমেছে। তবুও খামারিদের প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় ১০ টাকা। এমতাবস্থায় ব্যাপক লোকসানে পড়বে খামারিরা।
তিনি জানান, ডিমের দাম বাড়ায় খামারিরা পূর্বের অবস্থা কাটিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছিল। এভাবে আরও চার মাস থেকে পাঁচ মাস থাকলে প্রতিটি খামারি পূর্বের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারত।
বিদ্যুৎ বিভাগের চাকরিজীবী আব্দুল মান্নান বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সবজি থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম ছিল আকাশচুম্বী। এর মধ্যে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার মতো সাধারণ মানুষদের পরিবার-পরিজন নিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন দাম কমায় স্বস্তি পাচ্ছি।
দাশুড়িয়া এলাকার খামারি নজরুল ইসলাম জানান, খামারে ডিমের দাম কমেছে হালিতে ৫.৬০ টাকা। ৪২ টাকা হালির ডিম এখন ৩৬-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ প্রায় ১০.৫০ টাকা। বিক্রি করতে হচ্ছে ৯.১০ টাকায়। এতে ডিম প্রতি লোকসান ১.৪০ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে খামার বন্ধ হয়ে যাবে।