► ১১ কোটি টাকার সৌরবাতি যাচ্ছে চোরের পেটে ► মেরামতের জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই
পাবনার ঈশ্বরদীতে গত কয়েক বছরে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ৯৩৮টি সৌর সড়কবাতি স্থাপিত হলেও আলো দিচ্ছে মাত্র ৬০ থেকে ৬৫টি। দীর্ঘদিন ধরে সড়কবাতিগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের নির্দেশনা কিংবা বাজেট না থাকায় মূল্যবান সড়কবাতিগুলো প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় নষ্ট হওয়া সড়কবাতিগুলোর যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে রাতে আলোর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ঈশ্বরদীবাসী।
এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা, সাহাপুর, পাকশী, সলিমপুর, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি ও সাঁড়া ইউনিয়ন ঘুরে অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানের সোলার প্যানেল, বাতি ও লোহার খুঁটি পাওয়া যায়নি। সোলার প্যানেল খোলা দেখা গেছে অন্তত ৮০টি। শতাধিক জায়গায় খোলা রয়েছে বাতি। তবে সড়কবাতি চুরির সংখ্যা উপজেলার সাঁড়া, সলিমপুর, পাকশী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।
তবে ঠিক কতটি সোলার প্যানেল, সোলার হোম ও খুঁটি চুরি হয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈশ্বরদীতে বরাদ্দকৃত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৬৯টি, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪৬৮টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯৯টিসহ মোট এক হাজার ৫৩৬টি স্থাপিত সৌর সড়কবাতির সবই নষ্ট হয়ে গেছে। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৭৪টি সড়কবাতির মধ্যে বেশির ভাগই জ্বলে না। যে ৬০-৬৫টি জ্বলে, সেগুলোর আলোও অপর্যাপ্ত।
এসব সৌর সড়কবাতির প্রতিটিতে ব্যয় হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা। এই হিসাবে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
অন্ধকার এলাকার সড়ক, হাট-বাজার, মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান, ঈদগাহ, মন্দির, শ্মশানঘাট, সরকারি কার্যালয় ও ক্লাবগুলোতে এসব সৌর বৈদ্যুতিক বাতি লোহার খুঁটিতে সংযুক্ত করে স্থাপন করা হয়। বাতিগুলোর আলোর কারণে অন্ধকার এলাকাসহ সড়কে স্বাচ্ছন্দ্যে কিছুদিন চলাফেরা করা গেছে। কিন্তু স্থাপনের কয়েক মাস পর থেকেই বাতিগুলো আর জ্বলে না।
দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকায় কোথাও দেখা যাচ্ছে খুঁটিগুলো চোরেরা উপড়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও সোলার হোমসহ বাতি খুলে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও খুঁটিগুলোও উপড়ে তুলে নিয়ে ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রকল্পের একাধিক সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে সড়কবাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে কোনো বরাদ্দ নেই। এমনকি স্থানীয়ভাবে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণেরও নির্দেশনাও রাখা হয়নি। তবে এ প্রকল্পের নির্দেশ মোতাবেক ঈশ্বরদীর মোট বরাদ্দকৃত মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ জামানত হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) যৌথ স্বাক্ষরে সংরক্ষিত রাখা হয়। বাতিগুলো বিনা মূল্যে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করার কথা ছিল। যদিও সেগুলো মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের শুরুতেই একটি সিন্ডিকেট এ বরাদ্দের বেশির ভাগ অর্থই হাতিয়ে নিয়েছে। এ কারণে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই সড়কবাতিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্পের অধীন উপজেলায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট এব হাজার ৯৩৮টি সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছিল। দেশের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ইডকলের পরামর্শে বেসরকারি এনজিও টিএমএসএস এসব সড়কবাতি স্থাপন করেছে। মেয়াদ তিন বছর ছিল। উপজেলার এক হাজার ৯৩৮টি সড়কবাতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। প্রায় সব বাতিই নষ্ট হয়ে গেছে।