কেপিআইয়ের সার্ভে টিমের সভাপতি ও রাজশাহী রেঞ্জের অপারেশনাল অতিরিক্ত ডিআইজি নরেশ চাকমা পাবনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ (কেপিআই) হার্ডিঞ্জ ব্রিজসহ অন্যান্য স্থাপনার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদনে বলেছেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সুনাম কেপিআইয়ের সুষ্ঠু নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ প্রঙ্গে বলা হয়, অপ্রতুল নিরাপত্তা প্রহরী, দর্শনার্থী রেজিষ্টার নেই, নিরাপত্তা কমিটি গঠিত হয়নি, সিসি ক্যামেরা না থাকার পাশাপাশি ব্রীজের উভয়পাশে কাঁটাতারের বেড়া এবং সশস্ত্র টহলের ব্যবস্থা নেই।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে উল্লেখিত অভিমত ও সুপারিশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি আরও বলা হয়, ব্রিজের উভয়পাশে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন, ড্রেজিং, মাছ ধরা, নৌকা ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মূল ব্রিজের উভয়পাশে ২ কিলোমিটার দূরুত্বের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিতে বলা হয়।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের প্রবেশ মুখে ও উভয়পাশে ঝোঁপ-জঙ্গল, দোকানপাট জরুরিভাবে অপসারণের কথা বলা হয়েছে। গত ২১ মে এ প্রতিবেদনে কেপিআইয়ের ক্রুটি-বিচ্যুতি ও সর্বশেষ জরিপের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। পাকশী বিভাগীয় রেল কর্তৃপক্ষকেও প্রতিবেদনের কপি প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অথচ পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সন্নিকটে চলছে অবৈধ বালুর ব্যবসা। পাহাড় সমান বালুর স্তুপ সাজিয়ে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়াই শুধু ম্যানেজ করেই বছরের বছর জমিয়ে চলছে রমরমা বালুর ব্যবসা। খরচ বলতে নৌকা ভাড়া, চাঁদা আর লেবার খরচ। স্থানীয় কতিপয় নেতা এ বালু ব্যবসার হর্তকর্তা।
কেপিআইভূক্ত এলাকায় বালুর ব্যবসা সহযোগীতা করছে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ভূসম্পত্তি অফিস, লক্ষীকুণ্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়িসহ অন্যান্য সংস্থা।
প্রকৌশলীদের মতে, বালু স্তুপের কারণে বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর স্রোত বাধাগ্রস্থ ও গতিপথ পরিবর্তন হয়। এতে ব্রিজের পিলার ও গাইড ব্যাংকের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন।
জানা গেছে, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে নদী তীরবর্তী গাইড ব্যাংক এলাকা কৃষিকাজের জন্য রেলওয়ের ভূসম্পত্তি অফিস থেকে লিজ দেওয়া হয়েছে। এখানে কৃষিকাজ হয় না। লিজ গ্রহীতাদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে বালুর ব্যবসা চলছে। বালুর স্তুপ বড় হতে হতে বিশাল স্তুপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু।
স্থানীয়রা জানান, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রকরা প্রতিদিন টাকা ওঠানোসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব পালন করে।
টাকার হিসেবে এসব ঘাট থেকে প্রতিদিন ২০-৩০ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়। ট্রাক প্রতি এবং বালুর ফুট হিসেব করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়।
রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন-২) বীরবল মণ্ডল বলেন, পদ্মা নদীর পানি প্রবাহ মূলত আপস্ট্রিমের পানি প্রবাহ। বৃটিশরা যখন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরি করে ব্রিজ রক্ষার জন্য বাঁধ (গাইড ব্যাংক) আপস্ট্রিমে অনেক দূর পর্যন্ত করেছে। এটি ব্রিজ রক্ষার স্বার্থেই। বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গাইড ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সমস্যা কেউই গুরুত্ব দিচ্ছে না। এভাবে যদি রক্ষা বাঁধটাকে ধ্বংস চালানো হয়। তবে যদি হঠাৎ বন্যা আসে তাহলে রক্ষা বাঁধ ধ্বংসে ব্রিজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ব্রিজের ডাউন স্ট্রিমের বালুমহাল স্থানান্তর খুবই জরুরি। এতে ব্রিজ রক্ষা পাবে বলে জানান তিনি।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সূফি নূর মোহাম্মদ বলেন, ওই জমি রেলের। এতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঝুঁকির সম্মুখীন। ব্রিজের পিলার রক্ষার জন্য গাইড ব্যাংক করা হয়েছে। বালুর কারণে গাইড ব্যাংকেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
বালু ব্যবসা থেকে রেলের কোনো আয় হয় না জানিয়ে ডিআরএম আরও বলেন, আয় অর্জনের চেয়ে কারিগরি দিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী চক্র। আপোষে বালু সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। আপোষে সরিয়ে না নিলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং গাইড ব্যাংক রক্ষার জন্য শক্তি প্রয়োগ করা হবে।
উপজেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার (ভূমি) টিএ রাহসিন কবীর জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আশেপাশের এলাকা কেপিআইভূক্ত। কেপিআইভূক্ত এলাকায় বালুমহাল বা ব্যবসার সুযোগ নেই। ঈশ্বরদীতে স্বীকৃত কোনো বালুমহাল নেই বলে জানান তিনি।