প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপবান উদ্ভিদ সূর্যমুখী। এ ফুলের নান্দনিক হলদে আভায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সূর্যমুখী হাসে, আর তার হাসিতে প্রকৃতি অপরূপ রূপে সাজে।
ঈশ্বরদীর মতো সূর্যমুখী ফুলের এতো বড় আকারের বাগান আগে পাবনা জেলার আর কোথায় দেখা যায়নি। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে ২ একরেরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর হলুদ আভায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। তাই দিনভর সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছে ফুল প্রেমীরা।
সূর্যমুখী দেখতে আসা দর্শনার্থী ফাহমিদা শাপলা বলেন, শহরের ঘরবন্দী থেকে একটু মুক্ত হাওয়ায় বেড়াতে ও বাগান ভরা ফুল দেখতে এখানে আসা। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর লাগছে। তাই সবাই মিলে এ মনোরম দৃশ্য ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করছি।
কৃষি অফিস জানায়, ঈশ্বরদীর মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তেল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে সাত মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। আর বিঘায় তেল উৎপাদন হবে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজার মূল্য ২৫০-৩০০ টাকা। বিঘাতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়ক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসি বেগম জানান, দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরও লক্ষ্যে বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমুখী ফুলের ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদীতে সূর্যমুখী চাষের বিস্তার ও জনপ্রিয়তার উদ্দেশ্যে স্থানীয় কৃষি বিভাগ নানাভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে।ডাল গবেষণা কেন্দ্র ও ঈশ্বরদী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মহিউদ্দিন বলেন, খাটো জাতের এ সূর্যমুখি ফুলের তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
এতে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন-ই থাকায় মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ ও ত্বকের উজ্জলতার জন্য খুবই উপকারিতা রয়েছে। এজন্য জাতটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।